ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় গতকাল সোমবার ভোর থেকেই শুরু হয় বৃষ্টি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বৃষ্টির দাপট। একটু পরপর দমকা হাওয়ার সঙ্গে দিনভর কখনো জোরে কখনোবা ঝিরঝির করে চলতে থাকে বৃষ্টি। এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সকালে কর্মস্থলের উদ্দেশে কিংবা স্কুলে যেতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা। একই অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় বিকেলে বাসায় ফেরার ক্ষেত্রেও।
সকালে শুরুতেই বিপাকে পড়েন মেট্রোরেলের যাত্রীরা। দিনের শুরুতে মেট্রোরেলের চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। অনেকে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাননি।
বৃষ্টিতে ঢাকা দুই সিটির অনেক এলাকার সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতার পরিমাণ ছিল হাঁটু কিংবা কোমরসমান। এ ছাড়া বৃষ্টিতে ঢাকার বসুন্ধরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, মগবাজার, মোহাম্মদপুরসহ অন্তত ৫০টি জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে।
সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় ১৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল সকালে ঢাকার রাস্তায় গণপরিবহন তুলনামূলক কম ছিল। কাজের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে অনেকেই রাস্তায় বাস পাননি।
সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, খামারবাড়ি, তালতলা, শেওড়াপাড়া ও কাজীপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে অফিস, স্কুলগামী শত শত মানুষকে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একই অবস্থা দেখা গেছে বিকেলেও।
কর্মস্থল বারিধারায় যেতে সকাল আটটার দিকে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন জেসমিন খন্দকার। প্রথমে মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালকের সঙ্গে কথা বলেন; কিন্তু বারিধারা যেতে চালকেরা রাজি হননি। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বৃষ্টিতে বাস-সিএনজিচালিত অটোরিকশা কিছুই পাইনি। বাসের অপেক্ষায় থেকে বৃষ্টিতে অর্ধেকের বেশি ভিজে গেছি। অফিসে জানিয়ে দিয়েছি, আজ আর যাওয়া সম্ভব নয়।’
দিনভর বৃষ্টিতে ঢাকা দুই সিটির বিভিন্ন এলাকার সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। গতকাল দুপুরের পর কোনো কোনো এলাকায় হাঁটু কিংবা কোমরসমান পানি জমে ছিল। বেশি পানি জমে যাওয়া সড়কে যানবাহনের ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হতে দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটির মিরপুরের পাইকপাড়া, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর-১০ নম্বর, ফার্মগেটের পশ্চিম রাজাবাজার, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, বিমানবন্দর সড়ক, তুরাগ, উত্তরখান ও দক্ষিণখানের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা হয়েছে।
বিকেলে মিরপুরের কাজীপাড়া এলাকার সড়কে প্রায় কোমরসমান পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এ সময় ওই সড়কে বেশ কিছু সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ির যন্ত্র অকেজো হতে দেখা গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে জানান, বৃষ্টিতে ডিএনসিসির ৯৪টি জায়গায় জমে থাকা পানি অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে তাদের ৫ হাজার ৩০০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও ১০টি কুইক রেসপন্স টিম কাজ করে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির গ্রিন রোড, কাঁঠালবাগান, নিউমার্কেট, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড–সংলগ্ন অরফানেজ রোড, হরনাথ ঘোষ রোড, হোসেনি দালান রোড, চানখাঁরপুল, কাজী আলাউদ্দিন রোড, বংশাল, মতিঝিল বলাকা মোড়, দিলকুশা, আরামবাগ, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, নাইটিঙ্গেল মোড়, শান্তিনগর, কাকরাইল, রাজারবাগ ও জুরাইন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের প্রথম আলোকে বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরের মধ্য দিয়ে যাওয়া একটি নালা বন্ধ ও আরেকটি নালা দিয়ে ঢাকা ওয়াসা পানির সংযোগ নেওয়ায় নিউমার্কেট এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে। এ ছাড়া দ্রুতগতির উড়ালসড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের) নির্মাণকাজ চলমান থাকায় গ্রিন রোড, মতিঝিল, কমলাপুর, ফকিরাপুল, পল্টন ও মগবাজার এলাকায় জলাবদ্ধতা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জলাশয়-জলাধার ভরাট হচ্ছে। ফলে ঢাকায় ৬০-৭০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা হয়, মানুষের ভোগান্তি হয়।