রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় ভবনটির ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলমসহ চারজনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজ শনিবার এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে নেওয়া অপর তিনজন হলেন ভবনের চুমুক নামের রেস্তোরাঁর দুই মালিক আনোয়ারুল হক ও শফিকুর রহমান এবং কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁর ব্যবস্থাপক জয়নুদ্দিন জিসান। তবে মামলার এজাহারে শফিকুরের নাম নেই।
পুলিশ ও আদালত–সংশ্লিষ্টসূত্রগুলো বলছে, বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। অপর দিকে আসামিদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন নাকচ করে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গতকাল শুক্রবার ও আজ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ নামের ভবনটিতে গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে আগুন লাগে। এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ১১ জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভবন থেকে ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে। মামলায় তিনজন ব্যক্তি ও একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিক আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ, ভবনের ব্যবস্থাপক মুন্সি হামিমুল আলম বিপুল (৪৫), চুমুক ফাস্ট ফুডের মালিক আনোয়ারুল হক (২৯) এবং কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁর মালিক সোহেল সিরাজকে (৩৪)। মামলায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপকে আসামি করা হলেও প্রতিষ্ঠানের কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদন নিয়ে ভবনমালিক ও ব্যবস্থাপক রেস্তোরাঁর জন্য ভাড়া দিয়েছেন। অন্যদিকে রেস্তোরাঁগুলোর মালিক ও ব্যবস্থাপকেরা ভবন ব্যবহারের যথাযথ নিয়ম অমান্য করে ব্যবসা করে আসছিলেন। তাঁরা নিয়ম না মেনে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দোকান পরিদর্শক কর্মকর্তাদের খুশি করে অবৈধভাবে রেস্তোরাঁ স্থাপন করেন। তাঁরা গ্যাসের চুলা ও সিলিন্ডার ব্যবহার করে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন, যা অবৈধ। তাঁদের অবহেলা ও বেপরোয়া কাজের জন্য সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে। এতে আগুনে দগ্ধ হয়ে ও শ্বাসনালিতে ধোঁয়া ঢুকে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে মামলায় ভবনমালিক হিসেবে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের নাম আসায় এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ বিভাগের প্রধান গাজী আহম্মেদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের মালিকানা এখন মোহাম্মদ গ্রুপের নেই। ২০১৫ সালেই এ ভবন নির্মাণের পর তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভবনের জমির মালিক ছিলেন একজন নারী। শর্ত অনুযাযী নির্মাণ শেষে ভবনের মালিককে তাঁর অংশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাওয়া অংশ পরে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বর্তমানে ভবনের আলাদা মালিক সমিতি আছে। তারাই সব পরিচালনা করে।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে গাজী আহম্মেদ উল্লাহ বলেন, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ সব সময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন অনুযায়ী মামলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।