সংবিধান কীভাবে পরিবর্তন করা হবে, তা নির্ভর করছে নাগরিকদের চিন্তার ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। নতুন সংবিধানের ভাষা হতে হবে সর্বসাধারণের ব্যবহৃত ভাষায়।
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে ‘নয়া বাংলাদেশের সংবিধান ভাবনা: সংকট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তারা এ কথা বলেছেন। ‘সিটিজেন ইনিশিয়েটিভ’ সেমিনারটির আয়োজন করেছে।
সেমিনারে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আমরা চাই এই সরকার মানুষের ভাষা বুঝবে, সরকার ইতিমধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিটিও করেছে। আমাদের দল থেকে আমরা বারবার বলছি, যত দিন আপনাদের সংস্কার লাগে আপনারা করেন। তবে এ সরকারের মূল লক্ষ্য থাকতে হবে জনগণের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া। এ জন্য একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।’
জয়নুল আবেদিন বলেন, ‘আমরা যখন হাসপাতালগুলোতে যাই, আমরা দেখতে পাই কত কত মানুষ পঙ্গু অবস্থায় আছে, কারও হাত নাই, পা নাই। সুতরাং এ সরকারকে অবশ্যই জড়িতদের বিচার করতে হবে।...শেখ হাসিনা এত পাপ করেছে, তারও বিচার হওয়া উচিত।’
জয়নুল আবেদিন আরও বলেন, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা চালু করতে হবে। কেউ দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
সেমিনারে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ’৭২-এর যে সংবিধান আছে—এটা না সংবিধান, না আইনের বই, না অন্য কিছু। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র, ২৪-এর আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নতুন সংবিধান রচনা করতে হবে।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমাদের আগের সংবিধান ছিল একধরনের পুঁজিবাদী সংবিধান, যা সাধারণ মানুষদের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি।...নতুন সংবিধানের ভাষা হতে হবে সর্বসাধারণের ব্যবহৃত ভাষায়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল কাদের বলেন, ‘যখনই যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তখনই ক্ষমতা কাঠামোকে নিজেদের মতো করার জন্য তাদের মতো করে সংবিধান সংশোধন করেছে। ফ্যাসিস্ট যে প্রবণতা, এক ব্যক্তির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার যে প্রবণতা, তা আমাদের এই সংবিধানে ছিল। আমরা দেখেছি মানুষকে শাসন করার নামে শোষণ করার যে প্রবণতা, তা এই সংবিধানে ছিল।’
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল বলেন, গত ১৫ বছর এই সংবিধান একটি দল, একটি পরিবারকে সুরক্ষা দেওয়া দিয়েছে। এটি গণমানুষের সুরক্ষা দিতে পারেনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মনিরা পারভীন বলেন, এই সংবিধান গণমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করতে পারেনি। তাই এটি রাখার যৌক্তিকতা আছে কতটুকু?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, সংবিধান কীভাবে পরিবর্তন করবেন, তা নির্ভর করবে নাগরিকদের চিন্তার ওপর। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।