বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (সিএমইসি) প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা কাজ শুরু করেছেন। মোট ৪টি টারবাইনের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ৪২ দশমিক ৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ২০২৫ সালের মধ্যে অন্তত একটি টারবাইন চালু করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে ‘বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট’ নির্মাণকাজের পরিদর্শন গিয়ে মেয়র এসব কথা বলেন। ‘আমিন বাজার ল্যান্ডফিল সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণ শীর্ষক প্রকল্পের (১ম সংশোধিত)’ আওতায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মোট ১ হাজার ২৭২ কোটি টাকা ব্যয় হবে।
মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে। বর্জ্য রূপান্তরিত হবে সম্পদে। ফলে পরিবেশবান্ধব পরিচ্ছন্ন ঢাকা গড়ে উঠবে।
চীনা কোম্পানিকে ৩০ একর জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, চীনা কোম্পানি জানিয়েছে প্রকল্প শেষ করতে তাদের দুই বছর সময় লাগবে। অর্থাৎ ২০২৬ সালের মধ্যে এ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি প্রতি দিন তাদের তিন হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য সরবরাহ করবে।
মেয়র বলেন, এবারের অলিম্পিকের গোল্ডের যে মেডেলগুলো দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ই-বর্জ্য থেকে তৈরি করা হয়েছে। যা মুঠোফোনের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ থেকে তৈরি। এ দেশেও অনেক মুঠোফোন ব্যবহার করা হয়। মুঠোফোন, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশনের মতো ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করা হবে।
সম্প্রতি একনেকে অনুমোদন পাওয়া একটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে মেয়র বলেন, দেশে অনেক ভবন ভাঙা হচ্ছে। ওই ভবনের বর্জ্যগুলোকে কাজে লাগানো যাবে। ভবনের ভাঙ্গারি দিয়ে পাইপ ও বিভিন্ন ধরনের কনস্ট্রাকশন ব্লক বানানো হবে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও কোনো প্রকল্প নেই। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মেডিকেল ও ই-বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হবে।
এ সময়ে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘স্মার্ট দেশ গঠনে চীন বাংলাদেশের পাশে আছে। প্রথম পর্যায়ে ২৫ বছর প্রকল্পটির দায়িত্ব থাকবে চীনের সিএমইসি। বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটি মেগা প্রকল্প না হলেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। এর মাধ্যমে স্মার্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানায়, গত ৩১ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (একনেক) ঢাকা উত্তর সিটির এই প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পের ব্যয়ের মধ্যে সরকার (জিওবি) ১ হাজার ২৪৩ দশমিক ৪৮ কোটি টাকা দেবে। সিটি করপোরেশন দেবে ২৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের মাধ্যমে জমির ওপর চাপ কমানো প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য। এ ছাড়া পরিবেশবান্ধব উপায়ে বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহন ও নিরাপদে নির্দিষ্ট স্থানে অপসারণ, বর্জ্য হতে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ হ্রাস করা, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় ৮০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০ একর জমিতে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে। বাকি ৫০ একরে মেডিকেল ও ই-বর্জ্যের জন্য ল্যান্ডফিল করা হবে। এ ছাড়া প্রকল্পটির আওতায় তিনটি হাইড্রোলিক এক্সকেভেটর, ৬টি চেইন ডোজার ও দুটি লং আর্ম এক্সকেভেটর কেনা হবে। সঙ্গে ভূমি উন্নয়ন, রাস্তা ও বাঁধ নির্মাণের কাজ রয়েছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি দিন ৩ হাজার টন বর্জ্য পোড়ানোর মাধ্যমে ৪২ দশমিক ৫ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। বর্জ্য পোড়ানোর ফ্লাই অ্যাশ বা ছাই সিমেন্ট কারখানায় সিমেন্ট তৈরির উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বটম অ্যাশ সড়ক নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত হবে।
প্রকল্প পরিদর্শনে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজাসহ চায়না মেশিনারি ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।