রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে চালু হওয়া ‘হলিডে মার্কেট’ বসেছিল ১০০টি স্টল
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে চালু হওয়া ‘হলিডে মার্কেট’ বসেছিল ১০০টি স্টল

আগারগাঁও ‘হলিডে মার্কেটে’ পণ্যের দাম কেমন

সড়কের দুই পাশে বড় বড় ছাতার নিচে সারি সারি স্টল। এসব স্টলের কোনোটিতে চামড়াজাত, কোনোটাতে পাটজাত, আবার কোনোটিতে পোশাক, সাজসজ্জা, গৃহসজ্জা, পিঠা, মিষ্টি, গাছের চারা, এমনকি শাকসবজি, হাঁস-মুরগিও ছিল। ছিল কারুশিল্প বা হস্তশিল্পের স্টলও।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পর্যটন ভবন থেকে নির্বাচন কমিশন ভবন পর্যন্ত বিস্তৃত সড়কে চালু হওয়া ‘হলিডে মার্কেট’ গিয়ে দেখা গেল এমন দৃশ্য। দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) উদ্যোক্তাদের পণ্য নিয়ে আজ শুক্রবার পরীক্ষামূলক এ মার্কেট চালু হয়। ঢাকা উত্তর সিটি এবং ঐক্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এ মার্কেটের আয়োজন করে। সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার এ মার্কেট চালু থাকবে। মার্কেটে রাখা হয়েছে ১০০টি স্টল। সকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি ও ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম এই হলিডে মার্কেটের উদ্বোধন করেন।

ছিল চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্যের স্টল

ওই মার্কেটে চামড়ার তৈরি ছেলেদের জ্যাকেট, ওয়ালেট, বেল্ট, অফিস ব্যাগ, মেয়েদের ভ্যানিটি ব্যাগ ও জুতার মতো চামড়াজাত বিভিন্ন পণ্য ২০০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। নারীদের চাদর, ওয়ান-পিস, থ্রি-পিস এবং কটির মতো বাহারি নকশার পোশাক বিক্রি হয় ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

রাজধানীর হাজারিবাগ থেকে ত্রি-টেক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা চামড়ার তৈরি বিভিন্ন পণ্যের স্টল দিয়েছেন। সেখানে অফিস বা এক্সিকিউটিভ ব্যাগ ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায়, বেল্ট ৫০০ থেকে ১ হাজার, জুতা ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ৭৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

বিক্রেতা আরিফ ফয়সাল জানান, বিক্রি বেশি না হলেও মানুষের মধ্যে অনেক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। মার্কেট ধারাবাহিকভাবে প্রতি সপ্তাহে চালু রাখা গেলে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাবে বলে মনে হচ্ছে।

মেলার বিভন্ন স্টল ঘুরে দেখেন অতিথিরা

পাশেই তুনাজ্জিনা স্টাইল নামের একটি স্টলে বাহারি নকশার মসলিন, জামদানি, হাফ সিল্ক কাপড়ের তৈরি শাড়িসহ নারীদের পোশাক বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিক্রেতা আনোয়ারুল ইসলাম জানান, তাঁর স্টলে আড়াই হাজার থেকে ১৭ হাজার টাকা মূল্যের শাড়ি আছে। অন্যান্য কাপড় কেনা যাবে ৭৫০ থেকে ২ হাজার টাকায়।

কিছু দূর এগোনোর পরেই চোখে পড়ল পাট, বাঁশ ও বেতের তৈরি গৃহসজ্জার বিভিন্ন পণ্য একটি স্টলে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বিক্রেতা এসব পণ্যের দাম চাচ্ছেন ১৫০ থেকে ৭৫০ টাকা।

ছিল বাঁশ ও বেতের তৈরি পণ্যের স্টল

কাজী ফ্যাশন হাউস নামের প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা মাজহারুল হক বলেন, পাটের তৈরি ব্যাগগুলোর মূল্য ১৭০ থেকে ৭০০ টাকা। এ ছাড়া বাঁশ ও বেতের তৈরি যেসব পণ্য রয়েছে, সেগুলোর দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। যাত্রাবাড়ীতে কার্যালয় হলেও পণ্যগুলো বরিশাল, যশোর ও দিনাজপুর এলাকা থেকে তৈরি করিয়ে আনা হয় বলেও জানান এই উদ্যোক্তা।

মার্কেটে গেলে রংতুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা বাহারি নকশার মাটির পাত্র ও কাচের বোতল কিংবা আঁকা ছবির কয়েকটি স্টলে অনেকের চোখ আঁটকে যাবে। উদ্যোক্তারা এগুলো নিজেরাই মনের মাধুরী মিশিয়ে এঁকেছেন। ক্রেতাদের কাছে গৃহসজ্জার এসব জিনিসের দাম চাওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা।

অনেক উদ্যোক্তাই নিজের খেতে চাষ করা শাকসবজি নিয়ে এসেছিলেন

অনেক উদ্যোক্তাই নিজের খেতে চাষ করা শাকসবজি নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে ছিল চেরি টমেটো, বিট রুট, লেটুসপাতা, ব্রকলিসহ রাসায়নিকমুক্ত নানা ধরনের শীতকালীন সবজি। এগুলো প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায়।

আবার অনেকে এসেছেন বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস-মুরগি নিয়ে। লবলং নামের এমন এক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা জিয়ারুল বিশ্বাস। বিভিন্ন সবজির পাশাপাশি তিনি নিজের খামারে পালিত দেশি হাঁস-মুরগি, ডিম এবং বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস–মুরগি বিক্রির জন্য এনেছেন।

এক জোড়া সিলকি মুরগি ।দাম চাইছেন ১০ হাজার টাকা

জিয়ারুলের স্টলে প্রতি কেজি বেইজিং হাঁস ৬০০ টাকা, মুরগি ৭০০ টাকা, টাইগার মোরগ ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এক জোড়া সিলকি মুরগি এনেছেন বিক্রির জন্য, দাম চাইছেন ১০ হাজার টাকা। এ ছাড়া হাঁসের ডিম প্রতিটি ২০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।

সাপ্তাহিক ছুটির দিকে বিকেলে ওই এলাকায় সন্তানদের নিয়ে বেড়াতে যান বেসরকারি চাকরিজীবী হাসানুল ইসলাম। তিনি বলেন, মার্কেটের উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো হয়েছে। এর মাধ্যমে সরাসরি উৎপাদনকারীদের সঙ্গে ক্রেতাদের সেতুবন্ধন তৈরি হবে। এতে কম দামে ভালো মানের পণ্য কেনার সুযোগও তৈরি হবে। পাশাপাশি দেশের উদ্যোক্তাদের পণ্য বিক্রির সুযোগ তৈরি হবে।

ছিল বিভিন্ন খাবারের স্টল

মার্কেটে স্টল দেওয়া উদ্যোক্তারাও ভবিষ্যতে বেচাবিক্রি ভালো হওয়ার আশা করছেন। অনেক উদ্যোক্তা বলেন, বিকেল ও সন্ধ্যা হলেই আশপাশের এলাকার লোকজন এ জায়গায় বেড়াতে আসেন। প্রথম দিনেই মানুষের যেমন আগ্রহ দেখছেন, ভবিষ্যতে বিক্রি ভালো হবে, আশা তাঁদের।

মার্কেটে অনেক উদ্যোক্তা নিজের তৈরি চকোলেট, মাশরুমের চিপস, নাড়ু, চিড়া ভাজাও বিক্রি করেন। ছোট ছোট মোড়কে বিভিন্ন পরিমাণে রাখা এসব খাদ্যপণ্য ৪০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

মেলায় ছিল বাহারি পণ্যর স্টল

লিচু, শর্ষে, কালিজিরা, ধনে ও বরই ফুলের মধুর পাশাপাশি সুন্দরবনের মধুও বিক্রি করেন অনেকে। এসব মধুর দাম প্রকারভেদে প্রতি কেজি ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার টাকা।

কোনো কোনো উদ্যোক্তা আবার নিজের কারখানায় তৈরি করেছেন কয়েক পদের চা। এসবের কোনোটি তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের মসলার মিশ্রণে, কোনোটি আবার শজনেপাতা কিংবা জিরা দিয়ে তৈরি। ২৫ থেকে ৩০টি টি-ব্যাগের ছোট ছোট একেকটি মোড়ক, দাম ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা।

উদ্যোক্তা মৌসুমি আক্তার এসব চা ২০ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, শজনেপাতা শুকিয়ে শজনে চা তৈরি করা হয়। এই চা খেতে সুস্বাদু না হলেও এর স্বাস্থ্যগুণ রয়েছে। সাত গ্লাস দুধের সমান পুষ্টিগুণ একটি টি-ব্যাগের শজনেপাতার চায়ে রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।

সুই-সুতার বুননে কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা মানুষের ছবির স্টলও রয়েছে মার্কেটে। দেশ-বিদেশের রাজনীতিক, সংস্কৃতি, ক্রীড়াঙ্গনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার খ্যাতিমানদের মুখ সেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। একেকটি ছবির দাম লাখ টাকার ওপরে।

সুই-সুতার বুননে কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা মানুষের ছবির স্টলও রয়েছে মার্কেটে

ব্যতিক্রমী এমন কাজের উদ্যোক্তা ইলোরা পারভীন। তিনি বলেন, একেকটি ছবি তৈরিতে তিন থেকে চার মাস সময় লাগে। তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের একটি ছবি এভাবে এঁকেছেন। সেটি এবার বাণিজ্য মেলায় নেওয়া হয়েছে। ওই ছবির মূল্য চাইছেন ১০ লাখ টাকা। তবে হলিডে মার্কেটে আনা ছবিগুলোর মূল্য তিনি এক থেকে দেড় লাখ টাকা চাইছেন বলেও জানান।

রান্নার কাজে কাটাকুটির বিভিন্ন উপকরণও পাওয়া যাচ্ছে মার্কেটের স্টলগুলোতে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দামের বঁটি। এর মধ্যে ৮৫০ টাকা থেকে শুরু করে ২ হাজার ৪৫০ টাকার বঁটি রয়েছে। উঁচু কোনো টেবিলে রেখেও বঁটিগুলো ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনে বঁটির কাটার অংশটি নিচের দিকে মুড়িয়ে রাখা যাবে। আবার বঁটির কাটার অংশটি খুলে সেখানে নারকেল কুড়ানিও লাগিয়ে ব্যবহার করা যাবে।

ঢাকা উত্তর সিটি জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ক্রেতাদের কেনা কোনো পণ্যে ত্রুটি থাকলে সেটি পরিবর্তন করে দেওয়া হবে। যদি ওই পণ্য স্টকে না থাকে, তাহলে টাকা ফেরত দেওয়া হবে। দুই দিনের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাবদ উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কোনো উদ্যোক্তার বিক্রি আশানুরূপ না হলে রেজিস্ট্রেশনের টাকার কিছুটা ফেরত দেওয়া হবে।