পটুয়াখালী থেকে ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন মাখন মিয়া, সঙ্গে স্ত্রী ও ছেলে মোজাহিদ। ছয় বছরের মোজাহিদের শ্বেতীরোগ আছে, রোদে তাকাতে কষ্ট হয়। উত্তরা থেকে ভেঙে ভেঙে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত এসেছে পরিবারটি। সঙ্গে দুটি ব্যাগ।
আজ বুধবার বেলা আড়াইটায় মাখন মিয়ার সঙ্গে কথা হয় কারওয়ান বাজার এলাকায়। স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে রিকশায় মহাখালী থেকে এসেছেন। সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সার্ক ফোয়ারা মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেছেন। এই পরিবারকে বহনকারী রিকশাটিকে সামনে যেতে দেননি তাঁরা।
মাখন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোস্তগোলা যাব। মহাখালী থেকে ২০০ টাকায় রিকশা নিয়েছিলাম গুলিস্তান পর্যন্ত। কারওয়ান বাজার নামিয়ে দিয়েছে। সামনে আগানোর উপায় নেই। হেঁটে হেঁটে কত দূর যেতে পারব, বুঝতেসি না। ছেলেটা আগে থেকেই অসুস্থ, গরম ও রোদে কাহিল হয়ে গেছে।’
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল এবং সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করার দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ বেলা সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি দল কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারা মোড়ে অবরোধ করে। তখন থেকে এই মোড় দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। যানবাহনগুলো যেখানে ছিল, সেখানে সেভাবে আটকা পড়েছে। রিকশাসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পাশের এফডিসি মোড়েও।
বেলা সোয়া দুইটা থেকে তিনটা পর্যন্ত সার্ক ফোয়ারা মোড়ে অবস্থান করে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা চার দিকের সড়কেই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছেন। বিভিন্ন কাজে বের হওয়া মানুষ নানাভাবে আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে সামনে এগোনোর চেষ্টা করছেন। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য যানবাহন সামনে এগোতে দেওয়া হচ্ছে না।
তেজগাঁওয়ের জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসক দেখিয়ে মা সালেহা বেগমকে নিয়ে ফিরছিলেন আফরোজা বেগম। কারওয়ান বাজার এফডিসি ক্রসিংয়ে আটকা পড়েন। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে কারওয়ান বাজার মোড় পর্যন্ত এসেছেন।
আফরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যাব ধানমন্ডি। সিএনজি এগোতে দিল না। রোদে হেঁটে আসতে মায়ের কষ্ট হয়েছে। এখন রিকশা পেলে নেব, না হলে হেঁটেই যতটা পারি আগাব।’
বিহঙ্গ পরিবহনের একটি বাস আটকে ছিল ব্যারিকেডের পেছনে। বাসের চালক মো. জয়নাল গেঞ্জি খুলে বাসের ভেতরে বসে গায়ে বাতাস দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আটকা পড়ছি। যাত্রীরা সব নেমে গেছে। বাস ঘুরায়ে চলে যাব, সেই উপায়ও নেই। সারা দিনের কামাই শেষ।’
গাড়ি না পেয়ে কামরাঙ্গীরচর থেকে পায়ে হেঁটে ধানমন্ডির একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন জসীম উদ্দীন। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে দাঁড়িয়ে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কামরাঙ্গীরচর থেকে প্রায় ৪০ মিনিট হেঁটে ধানমন্ডিতে আসলাম। অসুস্থ শরীরে হেঁটে আসতে খুব কষ্ট হয়েছে। চিকিৎসকের সময় নেওয়া ছিল, তাই কষ্ট করে আসলাম।’
মোটরসাইকেল আরোহীরা আন্দোলনকারীদের নানা অনুনয়-বিনয় করছিলেন। বসুন্ধরায় ভারতীয় ভিসা সেন্টারে ভিসার আবেদন করে লালবাগে ফিরছিলেন মো. ইউনুস। বাইক নিয়ে আটকা পড়েছেন কারওয়ান বাজার মোড়ে। তিনি বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির সমাধান করলেই হয়। মাঝখান দিয়ে আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে কয়েক দিন ধরেই।’