বাহাদুর শাহ পার্কে খাবারের দোকান নির্মাণের উদ্যোগ, স্থানীয়দের ক্ষোভ

পার্কের ভেতরে খাবারের দোকান তৈরির জন্য অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

সরু অলিগলি। লাগোয়া ঘরবাড়ি। এমন ঘরবাড়ির ফাঁক দিয়ে আকাশ দেখার উপায় নেই। ঠিকমতো বাতাস চলাচলও কঠিন। বুড়িগঙ্গাপারের পুরান ঢাকার চিরচেনা চিত্র এটি। এখানকার মানুষের কাছে তাই বাহাদুর শাহ পার্ক যেন এক স্বস্তির নাম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন এই পার্কে এসে হাঁটাচলা করেন। বিশ্রাম নেন। নেন প্রাণভরে নিশ্বাস। তবে সম্প্রতি পার্কটিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নেওয়া একটি প্রকল্পের কারণে স্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

‘ফুড ভ্যান’ প্রকল্প নামে পার্কের ভেতরে খাবারের দোকান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ডিএসসিসি। এ জন্য তারা গত ৩ আগস্ট ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা দরে দরপত্র আহ্বান করে। দরপত্র পাওয়া কর্তৃপক্ষ পার্কের ভেতরে স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করলে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ জানান।

পার্কের ভেতরে যেকোনো ধরনের দোকান করা নিয়েই আপত্তি স্থানীয় ব্যক্তিদের

প্রতিবাদের মুখে স্থায়ী অবকাঠামো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয় ডিএসসিসি। পরিবর্তে তারা ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানের একটি নকশা দিয়েছে। তবে পার্কের ভেতরে যেকোনো ধরনের দোকান করা নিয়েই আপত্তি স্থানীয় ব্যক্তিদের। এ ব্যাপারে তাঁরা গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, খাবারের দোকান তৈরির জন্য পার্কের ভেতরে লোহা দিয়ে অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। ফুড ভ্যান যেখানে করা হচ্ছে, তার সামনেই ঐতিহ্যবাহী পার্কটির মূল স্মৃতিসৌধের অবস্থান। আর ঠিক পেছনে ঢাকার নবাব খাজা আহসানউল্লাহর জ্যেষ্ঠ পুত্র খাজা হাফিজুল্লাহর স্মৃতিস্তম্ভ। দোকানটি পুরোপুরি তৈরি হলে এক পাশ থেকে এই দুটি স্মৃতিস্তম্ভ একসঙ্গে দেখা যাবে না।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পের বিষয়ে তাঁদের জানানো হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পার্কের ঐতিহ্য, সৌন্দর্য নষ্ট করা হচ্ছে। পার্কের ভেতরে যখন রান্না হবে, তখন পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়বে। আশপাশে অনেক রেস্টুরেন্ট থাকার পরও পার্কের ভেতরে কেন খাবারের দোকান করতে হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন এলাকাবাসী।

প্রকল্পটির বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন বলেন, ‘আমরা প্রথমে বিষয়টি বুঝতে পারিনি। এখন ইজারাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষকে স্থায়ী স্থাপনা ভেঙে ফেলার জন্য বলেছি। তারা ভ্রাম্যমাণ খাবার দোকান করবে। এ জন্য একটি নকশা করে দেওয়া হয়েছে। দোকান পরিচালনার পাশাপাশি তাদের দায়িত্ব থাকবে পার্ক পরিষ্কার করা। পার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকল্পের বিষয়ে তাঁদের জানানো হয়নি

সম্প্রতি সকালে ছেলেকে নিয়ে পার্কে হাঁটতে এসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলের স্কুল বন্ধ থাকায় তাকে নিয়ে বের হয়েছি। এই জায়গা ছাড়া পুরান ঢাকার এই অংশে আর কোনো খোলা জায়গা নেই। পার্কের ভেতরে ফুড ভ্যান তৈরির কাজ শুরুর পর আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছি। স্থায়ী অবকাঠামো এখনো সরিয়ে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তারা পার্কের মধ্যে কীভাবে একটি দোকান করে?’

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমরা পার্কে নিয়ম করে হাঁটতে আসি। এখানে খাবার দোকান দেওয়ার বিষয়টি একটি অবিবেচনাপ্রসূত পরিকল্পনা। এমন সিদ্ধান্ত তারা কোন যুক্তিতে নিল, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সিটি করপোরেশন এটাকে নিজেদের আয়ের একটি উৎস হিসেবে দেখছে বলে প্রতীয়মান হয়। কিন্তু এ রকম স্থাপনা পার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এমন দোকান তৈরি হলে পার্ক আর নিছক বিনোদনের স্থান থাকবে না। সেটা বাণিজ্যিক স্থানে পরিণত হবে। তা ছাড়া এলাকাবাসীর মতামত না নিয়ে এমন স্থাপনা আসলে একধরনের চাপিয়ে দেওয়া উন্নয়ন।