ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছাত্রকে নির্যাতনের ঘটনায় ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ বিরুদ্ধে থানায় মায়ের অভিযোগ

কবি জসীমউদ্‌দীন হলের সামনে জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে মারধর করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে পেটানোর ঘটনায় ‘প্রলয় গ্যাংয়ের’ বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রের মা। তিনি বলেছেন, তাঁর ছেলে জোবায়েরকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্টাম্প, রড, বেল্ট ও লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে অভিযুক্তরা। এতে মাথা ও চোখে গুরুতর জখম হয় সে। ছিঁড়ে যায় ডান পায়ের লিগামেন্ট।

শনিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসীমউদ্‌দীন হলের সামনে ওই ছাত্রকে পেটান তাঁর একদল সহপাঠী। তাঁরা ‘প্রলয়’ নামে ক্যাম্পাসভিত্তিক একটি গ্যাংয়ের সদস্য। মারধরের ঘটনায় মায়ের করা অভিযোগ পুলিশ গ্রহণ করেছে। এটি এখন আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

রোববার রাতে রাজধানীর শাহবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ ছাত্রের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়ের আরও ৬-৭ জনের বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের মা সাদিয়া আফরোজ খান।

জোবায়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র ও অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন। অভিযুক্ত ছাত্ররাও একই বর্ষের।

গ্যাং তৈরি করে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন কিছু শিক্ষার্থী। নিয়মিত মাদক সেবন, ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত এ গ্যাংয়ের সদস্যরা। জোবায়েরকে মারধরের ঘটনার পর ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের সদস্যদের পরিচয় সামনে এসেছে। এ নিয়ে প্রথম আলোতে রোববার একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

লিখিত অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ছাত্র তবারক মিয়াকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। নাম উল্লেখ করে আরও যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন একই হলের ছাত্র সিফাত সাহিল, ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে সাকিব, মো. সোভন ও সৈয়দ নাসিফ ইমতিয়াজ ওরফে সাইদ, সূর্য সেন হলের ফারহান লাবিব, মুহসীন হলের অর্ণব খান ও আবু রায়হান, কবি জসীমউদ্‌দীন হলের নাঈমুর রহমান ওরফে দুর্জয়, সাদ, রহমান জিয়া, মোশারফ হোসেন, জহুরুল হক হলের হেদায়েত নূর, মাহিন মনোয়ার, সাদমান তাওহিদ ওরফে বর্ষণ ও আবদুল্লাহ আল আরিফ, জগন্নাথ হলের প্রত্যয় সাহা ও জয় বিশ্বাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ফেরদৌস আলম ওরফে ইমন।

অভিযোগে জোবায়ের ইবনে হুমায়ুনের মা বলেন, শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সামনে বিভাগের বন্ধুরা মিলে ইফতার করছিলেন জোবায়ের। হঠাৎ একটি প্রাইভেট কার বেপরোয়াভাবে যাচ্ছিল। গাড়ির গতি বেশি থাকায় তাদের গায়ে কাদা ছিটে লাগে। এ সময় গাড়ির ভেতরে উচ্চস্বরে গান বাজছিল।

সাদিয়া আফরোজ খান অভিযোগে লিখেছেন, ‘আমার ছেলে এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধুরা ডাক দেওয়ার পরও গাড়িটি থামেনি। এরপর আমার ছেলে ও তার বন্ধুরা ইফতার শেষ করে কার্জন হলের দিকে যাচ্ছিল। বাংলা একাডেমি পার হওয়ার পর তিন নেতার মাজারের সামনে ওই গাড়িটা দেখে তারা চিনতে পারে। চালককে জিজ্ঞেস করে, এভাবে গাড়ি চালাচ্ছিলে কেন। পরে গাড়ি থেকে পাঁচজন ছেলে বের হয়। আমার ছেলে এবং তার বন্ধুরা দেখে যে তারা ক্যাম্পাসের ছাত্র। পরে অভিযুক্তদের একজন তাদের কথা না বাড়িয়ে চলে যেতে বলে। ক্যাম্পাসের ভেতরে কেউ এভাবে গাড়ি চালায় কি না, জানতে চাইলে অভিযুক্তরা উত্তেজিত হয়ে যায়। এ নিয়ে আমার ছেলে এবং তার বন্ধুদের সঙ্গে তাদের কথা-কাটাকাটি হয়।’

জোবায়েরের মা বলেন, ‘কথা-কাটাকাটির পর আমার ছেলে কবি জসীমউদ্‌দীন হলের দিকে চলে যায়। পরে ওই দিন সন্ধ্যায় একটি অপরিচিত মুঠোফোন নম্বর থেকে তাকে ফোন দিয়ে সে কোথায় আছে জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে আমার ছেলে তার অবস্থান জানায়। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে অভিযুক্তরা জোবায়েরকে হত্যার উদ্দেশ্যে স্টাম্প, রড, বেল্ট ও বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। এতে মাথা ও চোখে গুরুতর জখম হয়। ছিঁড়ে যায় ডান পায়ের লিগামেন্ট।’

মা আরও উল্লেখ করেন, মারধরের সময় জোবায়েরের বন্ধুরা তাঁকে রক্ষা করতে গেলে তাঁদেরও এলোপাতাড়ি পেটান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। প্রাণনাশের হুমকিসহ দেখানো হয় ভয়ভীতি। মারধরে জোবায়ের চেতনা হারিয়ে ফেললে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরে জোবায়েরকে তাঁর বন্ধুরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূর মোহাম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে।’

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘এই ঘটনার বিষয়টি স্যার এ এফ রহমান হল কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’