সলিমুল্লাহ খান
সলিমুল্লাহ খান

ক্ষমতার রূপান্তর হয়েছে, কিন্তু নতুনের পুরোপুরি জন্ম হয়নি: সলিমুল্লাহ খান

দেশে দুই মাস আগে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে ক্ষমতার রূপান্তর হয়েছে; কিন্তু নতুনের পুরোপুরি জন্ম হয়নি। এমন সময়ে সংকটের জন্ম হয়। এই পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন লেখক–অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে ‘বৈচিত্র্যে বহুত্বে বাংলার সংস্কৃতি: গ্যাঁড়াকল ও পরিত্রাণ’ শীর্ষক আলোচনায় সভাপ্রধানের বক্তব্যে তিনি এ কথাগুলো বলেন।

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, পাকিস্তানের শাসকেরা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যে অবিমৃশ্যকারী করেছেন, এই বাংলার শাসকেরা নিজ দেশের মানুষের সঙ্গে সেটির চেয়ে কোনো অংশে কম করেননি। তাঁর বক্তব্যে ’৭২–এর সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিফলিত না হওয়ার কথাও উঠে আসে।

‘সংস্কৃতি বাংলা’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভার শুরুতে ধারণাপত্র পাঠ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মাসউদ ইমরান। তিনি বলেন, ধর্মনির্ভর মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদ মোটাদাগে একে অপরকে খারিজ করে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছে। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি কি অপরাপর জাতিসত্তাকে নিয়ে ভেবেছে? একদমই ভাবেনি। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে।

আলোচনায় মানবাধিকারকর্মী ও লেখক ইলিরা দেওয়ান বলেন, ৭২-এর সংবিধানে ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা’ উল্লেখের মধ্য দিয়ে দেশের অন্যান্য ভাষাগুলোকে অস্বীকার করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কোনো অনুষ্ঠান বা দিবসের সময় আমাদের শোকেস থেকে বের করে উপস্থাপন করা হয়। পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদের পরিচিতিতে তারা কী খায়, কী পরে এসব উল্লেখ করা হয়; কিন্তু বিভিন্ন গৌরবময় ইতিহাসও যে তাদের আছে সেসব কেন তুলে ধরা হয় না?’

আগস্ট–পরবর্তী বাংলাদেশে অনেক কিছু বদলে গেছে বলে উল্লেখ করেন টঙ্গীর আল নূর মসজিদের খতিব শায়খ আলী হাসান তৈয়ব। তিনি বলেন, ধর্মের নামে যে সহিংসতা হয়, তা মূলত ধার্মিক মানুষদের কাজ নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ফাদার তপন ক্যামিলাস ডি রোজারিও বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে আমরা একটি গ্যাঁড়াকলে আছি। আসলে বাংলাদেশের সংস্কৃতি রাজনীতি আমাদের একটা আকৃতি দিয়েছে। ধর্মভিত্তিক ও ভাষাভিত্তিক রাজনীতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয়নি বলেই বর্তমানের এই সংঘাত।’

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী দেবধ্যানানন্দ বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘুর ওপর হামলা হচ্ছে। মহানবীকে কটূক্তি করা হচ্ছে। এটি একটি সংকটময় পরিস্থিতি।’

কবি সোহেল হাসান গালিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাজধানীর উত্তরার বৌদ্ধ মহাবিহারের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ মুদিতা পাল থের।