বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ। গত বৃহস্পতিবার থেকে ছাত্রলীগের সতর্ক অবস্থান শুরু হয়েছে। দুদিন ধরে দিনভর ক্যাম্পাসে মহড়া দিচ্ছেন সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। অবস্থান ও মহড়ার পাশাপাশি সচেতন শিক্ষার্থীদের ব্যানারে শনিবার ক্যাম্পাসের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) রাজু ভাস্কর্যে থাকছে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক আয়োজন।
মূলত বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় বিএনপি কিংবা ছাত্রদলের যেকোনো ধরনের তৎপরতা রুখতেই ছাত্রলীগ এ সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে একে বলা হচ্ছে ‘শান্তির স্বপক্ষে লড়াই’।
গত ৩ ডিসেম্বর সম্মেলনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর থেকে কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল না। গত বুধবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে সতর্ক অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন সনজিত-সাদ্দাম। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকেও একই নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরপরই বুহস্পতিবার সকাল থেকে দিনভর ক্যাম্পাসের টিএসসি, মধুর ক্যানটিন, নীলক্ষেত, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, কার্জন হল ও হাইকোর্ট মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা ছাত্রদল ও বিএনপির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন। বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেলের শোডাউনও দিতে দেখা যায়।
শুক্রবারও সকাল থেকেই ক্যাম্পাসের প্রবেশমুখসহ বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নেন ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখার নেতা-কর্মীরা। ছিল মোটরসাইকেলের শোডাউনও। ‘ছাত্রদলের গুণ্ডারা, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায় তাঁদের। মধুর ক্যানটিনে ছিলেন সনজিত-সাদ্দামও। জুমার নামাজের পরও ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এ অবস্থান অব্যাহত ছিল৷
এদিকে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে শনিবার টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘বিজয় মঞ্চ: সন্ত্রাস রুখতে সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকছে। এ আয়োজনে দিনব্যাপী প্রতিবাদী গান, নাচ, আবৃত্তি, মঞ্চ নাটক, মূকাভিনয় ও বিতর্কসহ নানা পরিবেশনা থাকছে। এ আয়োজনে '‘সচেতন শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ’ থাকবে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বলা হয়, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ এই ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে যেকোনো কুচক্রি মহলের অপপ্রয়াস রুখে দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব হাতে নিয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এ সাংস্কৃতিক আয়োজনটি করছেন। টিএসসিভিত্তিক সংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের এক বৈঠকের পর ওই আয়োজনের ঘোষণা আসে।
এসব তৎপরতা ও আয়োজনকে ‘শান্তির স্বপক্ষে লড়াই’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সন্ত্রাসী ছাত্রদের পলিটিক্যাল ফ্রন্ট হচ্ছে ছাত্রদল আর ঘাতকদের পলিটিক্যাল ফ্রন্ট হচ্ছে বিএনপি। ইতিমধ্যে দেশব্যাপী তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করার চেষ্টা করছে। তাদের তিন বছরব্যাপী অগ্নিসন্ত্রাসের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তাদের ককটেলবাজি-বোমাবাজির শিকার হয়ে অনেক শিক্ষার্থী এখনো দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করছেন। এবারও তাদের সেই অপচেষ্টা রয়েছে বলে আমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করা তাদের অন্যতম টার্গেট। এসব প্রতিরোধে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। শান্তির স্বপক্ষে এ লড়াইয়ের মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে সন্ত্রাসীদের মূলোৎপাটন করতে হবে।’