সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান
সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান

গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে শেষ রক্ষা হবে না: নজরুল ইসলাম খান

গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে শেষ রক্ষা হবে না বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। নজরুল ইসলাম খান বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম একটা চরম সংকটকাল অতিক্রম করছে। সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, গুম-খুনের কথা যাতে জনসমক্ষে উন্মোচিত হতে না পারে, সে জন্য একের পর এক পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে সরকার। গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে শেষ রক্ষা হবে না।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ব্যানারে আয়োজন করা হয় এ সমাবেশের। এখানে ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং দৈনিক দিনকালসহ বন্ধ মিডিয়া খুলে দেওয়া, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিলের’ দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন সাংবাদিকদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। আজ সাংবাদিকেরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছেন না। তাই দুর্নীতির অনেক খবর প্রকাশিত হতে পারছে না। বর্তমান সরকার যেসব সংবাদপত্র-টিভি চ্যানেল ‘অন্যায়ভাবে বন্ধ করছে’ ক্ষমতার পরিবর্তনের পর তা খুলে দেওয়া হবে বলেও অঙ্গীকার করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের সদস্যসচিব কাদের গনি চৌধুরী সমাবেশ সঞ্চালনা করেন।

সমাবেশে দৈনিক দিনকালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও বিএনপির চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, পেশাজীবী নেতা সিরাজ উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক আবদুল হাই শিকদার, এম এ আজিজ, লুতফর রহমান, গোলাম হাফিজ, শামসুল আলম, নুরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।

সমাবেশে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের অবস্থা খুবই খারাপ। এর কারণটা হচ্ছে আইনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা। বাংলাদেশে অসংখ্য আইন আছে, যা আমাদের দেশে স্বাধীন ও মুক্ত গণমাধ্যমের পরিপন্থী, প্রতিটি আইন সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের জন্য পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে হুমকিস্বরূপ। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারের জরিপে বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতার অবস্থান যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেরও নিচে। বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬২তম। এ থেকেই বাংলাদেশের সংবাদপত্রের বর্তমান অবস্থা স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি অবিলম্বে দিনকালসহ বন্ধ সব গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানান।

শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকারের নির্দেশে ডিসি দৈনিক দিনকালের ডিক্লারেশন বাতিল করেছেন এবং বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলও পত্রিকাটির আপিল খারিজ করে দিয়েছে। দেশের মানুষ মনে করে এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম আঘাত ও অগণতান্ত্রিক। আওয়ামী লীগ কখনোই মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত করে। ১৯৭৫ সালেও আওয়ামী লীগ সরকার ৪টি সরকার নিয়ন্ত্রিত পত্রিকা ছাড়া বাকি সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিল। বর্তমান সরকারকে বিনা ভোটের সরকার দাবি করে তিনি আরও বলেন, বর্তমান দুঃসময়ে সব গণমাধ্যমের কর্মীদের শঙ্কা ও ভয়ের মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের সমালোচনা করলে রোষানলের শিকার হয়ে বন্ধ করা হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন।

বর্তমান সরকারকে ‘নিশিরাতের সরকার’ দাবি করে কাদের গনি চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে গণমাধ্যমের যে কোনো স্বাধীনতা নেই, তা আবারও প্রমাণিত হলো। তিনি বলেন, দৈনিক দিনকাল পত্রিকাটি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী দলের মুখপত্র হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিরোধী দলের একমাত্র পত্রিকাটির প্রকাশনা বাতিল সরকারের চরম হিংসা চরিতার্থ করার বহিঃপ্রকাশ।