২৯ নম্বর ওয়ার্ডে মশকনিধনের কাজ করার কথা ১৭ কর্মীর। গতকাল কাজে অনুপস্থিত ছিলেন ৯ জন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে মশকনিধন কর্মী ১৭ জন। কিন্তু গতকাল মঙ্গলবার সকালে তাঁদের মধ্যে মাত্র আটজন মশকনিধনের কাজ করেছেন। অর্থাৎ অর্ধেকের বেশি কর্মী বা ৯ জন গতকাল মশকনিধনের কাজ করেননি।
উত্তর সিটির নিয়ম অনুযায়ী, সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে মশকনিধন কর্মীদের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু গতকাল ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধন কর্মীরা কাজে গেছেন সকাল ৯টার কিছু সময় পর।
মশকনিধনের কাজটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগের তত্ত্বাবধানে হয়। ২৯ নম্বর ওয়ার্ড ডিএনসিসি ৫ নম্বর অঞ্চলের আওতাধীন।
অর্ধেক মশকনিধন কর্মীর কাজে যোগ না দেওয়া এবং দেরিতে কাজ শুরু করার বিষয়ে ডিএনসিসি ৫ নম্বর অঞ্চলের দায়িত্বে থাকা সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এস এম ওয়াসিমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘ ছুটিতে ছিলেন। গতকাল (মঙ্গলবার) দেশে ফিরেছেন। এখন থেকে মশকিনধন কর্মীদের এমন গাফিলতি আর হবে না বলেও জানান তিনি।
অর্ধেকের বেশি কর্মী অনুপস্থিত
মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড, শাহজাহান রোড, আজিজ মহল্লা, জহুরি মহল্লা, বিজলি মহল্লা, টিক্কাপাড়াসহ আশপাশের এলাকা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। এখানে মশকনিধনের কাজে যুক্ত কর্মীর সংখ্যা ১৭। এর মধ্যে সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কর্মী তিনজন। বাকি ১৪ জন ঠিকাদারের মাধ্যমে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োজিত।
ঠিকাদার নিয়োজিত সাতজন এবং সিটি করপোরেশনের দুজন কর্মী গতকাল কাজে অনুপস্থিত ছিলেন। এই ওয়ার্ডে মশকনিধনের কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাও (সুপারভাইজার) গতকাল অনুপস্থিত ছিলেন।
গতকাল সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে মোহাম্মদপুরে কৃষি মার্কেট–সংলগ্ন ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধন কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মশকনিধন কর্মীরা বসে আছেন। কেউ ব্যস্ত মুঠোফোনে, কেউবা চেয়ারে বসে ঝিমাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর মশকনিধন কর্মীরা কাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কেউ মশার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র (স্প্রে মেশিন) হাতে নেন, কেউবা বোতলে মশার ওষুধ ভরার কাজ শুরু করেন। সকাল নয়টার পর তাঁরা মশার ওষুধ ছিটানোর উদ্দেশ্যে কার্যালয় থেকে বের হন।
অথচ ডিএনসিসির সূচি অনুযায়ী, সকাল সাড়ে আটটার মধ্যে মশকনিধন কর্মীদের ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করার কথা। দেরিতে কাজে যাওয়ার বিষয়ে মশকনিধন কর্মী আবদুল হাই বলেন, বেশির ভাগ কর্মী কাজে আসেননি। তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা।
২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধন কার্যালয় থেকে পরে মোটরসাইকেলে করে পাশের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে যান এই প্রতিবেদক। সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গতকাল ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবীনগর আবাসিকের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সড়ক এলাকায় ওষুধ ছিটানোর কথা মশককর্মী মো. জাবেদের। ওয়েবসাইটে মশকনিধন কর্মীদের তালিকায় জাবেদের মুঠোফোন নম্বর লেখা আছে। তাঁর নম্বরে কল করেন এই প্রতিবেদক এবং কোথায় আছেন, তা জানতে চান। তখন তিনি বলেন, ৬ নম্বর সড়কে কাজ করছেন। সেখানে কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর জাবেদকে একটি চায়ের দোকানে পাওয়া যায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরেক মশককর্মী আমির আলী। যদিও আমিরের কাজ করার কথা নবীনগর আবাসিকের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সড়ক এলাকায়।
বিকেলে ফগিং বন্ধ
বিকেলে মশা মারতে ‘ফগিং’ (ওষুধমিশ্রিত ধোঁয়া) করা হয়। গতকাল বিকেল ৫টার দিকে উত্তর সিটির ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে যান এই প্রতিবেদক। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের কার্যালয় লালমাটিয়ায়। এর পাশের মাঠের এক কোনায় মশকনিধনের অস্থায়ী কার্যালয়। সেখানে গিয়ে দেখা যায় কার্যালয় তালাবদ্ধ। পরে এই ওয়ার্ডের মশকনিধন কাজের তদারকি কর্মকর্তা রকিবুল ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রথম আলোকে জানান, আজ (গতকাল) তাঁদের ফগিং নেই। ফগিং শুধু সপ্তাহে তিন দিন। শনি, সোম ও বৃহস্পতিবার করা হয়।
ফগিং কমিয়ে এনে এখন লার্ভিসাইডিংয়ে (সকালে মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে ওষুধ ছিটানো) বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ডিএনসিসির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রুবাইয়াত ইসমত। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, যেসব ওয়ার্ডে মশকনিধন কর্মীরা কাজে অনুপস্থিত থাকবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এলাকায় মশার উপস্থিতি নিয়ে গত মার্চ মাসে একটি জরিপ করেন গবেষকেরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের নেতৃত্বে পরিচালিত ওই গবেষণায় দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসে কিউলেক্স মশার পরিমাণ ৪০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন এলাকায়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী, উত্তর সিটির মধ্যে কিউলেক্স মশা সবচেয়ে বেশি উত্তরায়, এরপর দক্ষিণখানে। কিউলেক্স মশার কামড়ে গোদ ও নানা ধরনের চর্মরোগ হতে পারে।