রাকিবুল হাসান
রাকিবুল হাসান

বাসার নিচে নেমে বুকে গুলি লেগে মারা যান রাকিবুল

প্রকৌশলী হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন ­ (২৭)। থাকতেন ঢাকার মিরপুরের কালশী রোড এলাকায়। কদিন আগে ঝিনাইদহে থাকা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় রাকিবুল জানিয়েছিলেন যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ঢাকার পরিস্থিতি ভালো নয়। পরিবারের সদস্যরা তখন তাঁকে সাবধান থাকতে বলেছিলেন। এর দুই দিন পর রাকিবুলের গুলিবিদ্ধ লাশ পেয়েছে পরিবার।

রাকিবুল ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক ও হাফিজা বেগমের সন্তান। ১৯ জুলাই ঢাকার মিরপুরে বাসা থেকে বের হলে তাঁর গায়ে গুলি লাগে। ২০ জুলাই দুপুরে শহরের সার্কিট হাউস পাড়ার বাড়িতে তাঁর মৃতদেহ এসে পৌঁছায়। পরে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়।

রাকিবুল একটা কাজে সন্ধ্যার সময় বাসার নিচে নেমেছিলেন। এ সময় গুলিতে তিনি মারা যান। সেখানে কীভাবে কী ঘটেছিল, তাঁরা কিছুই জানেন না। লাশের সঙ্গে রাকিবুলের দুই বন্ধু এসেছিলেন, তাঁদের মুখ থেকে এটা তাঁরা জেনেছেন।
ইকবাল হোসেন, সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার

রাকিবুলের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়া সার্কিট হাউসের সামনে একটি বাড়িতে বসবাস করেন। তাঁর বড় ছেলে ইকবাল হোসেন সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার।

ইকবাল হোসেন গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ১৯ জুলাই রাতে সহকর্মীরা জানান, রাকিবুল একটা কাজে সন্ধ্যার সময় বাসার নিচে নেমেছিলেন। এ সময় গুলিতে তিনি মারা যান। সেখানে কীভাবে কী ঘটেছিল, তাঁরা কিছুই জানেন না। লাশের সঙ্গে রাকিবুলের দুই বন্ধু এসেছিলেন, তাঁদের মুখ থেকে এটা তাঁরা জেনেছেন।

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবু বক্কর সিদ্দিকের ইচ্ছা ছিল, তাঁর দুই ছেলের মধ্যে একজন প্রকৌশলী হবে। বাবার ইচ্ছা পূরণ করতে রাকিবুল হাসান দিনরাত পড়ালেখা করেছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হন মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে (এমআইএসটি)। সেখান থেকে পাস করে অটোমোবাইল প্রকৌশলী হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

সার্কিট হাউস পাড়ার প্রতিবেশী পারভিন বেগম বলেন, রাকিবুল খুবই ভদ্র ছেলে ছিলেন। তাঁর বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু কীভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছেন না।

রাকিবুলের বড় ভাই ইকবাল হোসেন বলেন, রাকিবুল ঢাকার মিরপুর-১১–এর কালশী রোডের একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বা মিছিল-মিটিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না রাকিবুল। এমনকি কোটা সংস্কার আন্দোলনের কোনো মিছিল-মিটিংয়েও যাননি। মৃত্যুর দুই দিন আগে তিনি বাড়িতে ফোন করে সবার সঙ্গে কথা বলেন। রাকিবুল বলেন, ঢাকার পরিস্থিতি ভালো নয়। আন্দোলন চলছে। তাঁরা রাকিবুলকে সাবধানে থাকতে বলেছিলেন। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি।

সার্কিট হাউস পাড়ার প্রতিবেশী পারভিন বেগম বলেন, রাকিবুল খুবই ভদ্র ছেলে ছিলেন। তাঁর বিয়ের কথাবার্তা চলছিল। কিন্তু কীভাবে কী হয়ে গেল বুঝতে পারছেন না।