‘সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটাপদ্ধতি পুনর্বহালসংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ বহাল রাখার দাবিতে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের দাবি মানতে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছেন।
এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে সর্বাত্মক আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
আজ রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে এই ঘোষণা দেওয়া হয়৷ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশ নেন৷ বিক্ষোভ শেষে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেল বরাবর স্মারকলিপি দিতে যান৷ গত বৃহস্পতিবারও কোটা পুনর্বহালের রায়ের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে বড় বিক্ষোভ হয়৷
গত বুধবার সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। এর ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে নিয়োগ দেওয়ায় আর কোনো বাধা থাকল না বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী।
পরদিন থেকেই ওই রায়ের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামেন।
কোটাব্যবস্থা বাতিল চেয়ে রোববার বেলা ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হন। পরে সেখান থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ হয়ে সূর্য সেন হল ও রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে দিয়ে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর এলাকা ঘুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ হয়।
কর্মসূচিতে ‘কোটা প্রথার পুনর্বহাল, মানি না মানব না’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সংবিধানের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’ প্রভৃতি বলে স্লোগান দেওয়া হয়৷ এ সময় আন্দোলনকারীদের হাতে ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটায় যদি চাকরি হয়, যোগ্যতার কী দাম রয়?’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘আঠারোর পরিপত্র বহাল চাই’ প্রভৃতি লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল৷
রাজু ভাস্কর্যে সমাবেশে সমাপনী বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মাহিন সরকার। তিনি বলেন, ‘ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত আলটিমেটাম দিচ্ছি। ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র বহাল করা না হলে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলনে যাব। প্রয়োজনে আমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেব। তখন সর্বাত্মক ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলবে।’
এর আগে সমাবেশে বক্তব্য দেন শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ, মোয়াজ্জেম হোসেন, তামান্না আক্তার প্রমুখ। তাঁরাও আদালতের রায়কে প্রত্যাখ্যান করে বক্তব্য দেন। সমাবেশের পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল সুপ্রিম কোর্টে অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্মারকলিপি দিতে যান৷ স্মারকলিপিতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলকে কোটা পুনর্বহালের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বলে আন্দোলনকারীদের একজন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলন হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে কোটা পুরোপুরি বাতিল করে সরকার। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে। ওই পরিপত্রে ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে এবং ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) ও ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি বাতিল করার কথা জানানো হয়।