সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করা উন্নয়নকর্মীরা। এতে অংশ নেন সাধারণ মানুষও। ঢাকা, ৩ আগস্ট
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করা উন্নয়নকর্মীরা। এতে অংশ নেন সাধারণ মানুষও। ঢাকা, ৩ আগস্ট

অন্যায়ের বিরুদ্ধে আর কখনো মুখ বন্ধ রাখব না: সমাবেশে উন্নয়নকর্মীরা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশ করেছেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় কাজ করা উন্নয়নকর্মীরা। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল করেন তাঁরা। এতে হাজারো সাধারণ মানুষ অংশ নেন।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরে বিচারপতি শাহাবুদ্দীন আহমেদ পার্কের মুক্তমঞ্চে এ সমাবেশ হয়। সমাবেশে উপস্থিত উন্নয়নকর্মীরা উচ্চ স্বরে একসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের মুখ আর বন্ধ হবে না। যে সরকারই আসুক, যে দলই আসুক। গণমানুষের ওপর আর কোনো অত্যাচার আমরা মেনে নেব না। আমরা আর কোনো দিন চুপ থাকব না।’

জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উন্নয়নকর্মীদের সমাবেশ শুরু হয়। পরে একসঙ্গে বিভিন্ন স্লোগান দেন তাঁরা। এতে নেতৃত্ব দেন উন্নয়নকর্মী রুবাইয়াত সারোয়ার ও টনি মাইকেল।

পরে উন্নয়নকর্মীদের প্ল্যাটফর্ম ডিএসডিইর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রুবাইয়াত সারোয়ার। এতে বলা হয়, ‘শিশু, ছাত্রসমাজ, সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু এবং হাজার হাজার মানুষের আহত হওয়া ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও স্তব্ধ। ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষের দাবি আদায়ের আন্দোলনে সরকারের বলপ্রয়োগের কৌশল জাতিসংঘের ঘোষণার পরিপন্থী। আমরা বিশ্বাস করি, বাক্‌স্বাধীনতায় অযাচিত হস্তক্ষেপ ও বিকল্প মতামতের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীনদের আক্রমণাত্মক মনোভাব আমাদের বর্তমান অবস্থানে উন্নীত করেছে।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, ভয় বা আতঙ্কের মধ্যে থেকে একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়। আমরা ন্যায়বিচার চাই! আমরা নির্ভয়ে কথা বলতে পারার ও প্রতিবাদ করার অধিকার চাই! সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করতে আমরা সব সময় বদ্ধপরিকর।’

পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে রুবাইয়াত সারোয়ার বলেন, জোর করে মানুষের কথা বলার অধিকারকে দমিয়ে কখনো দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। মানুষের গণ–অধিকারকে দমিয়ে, কোনো টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন চুপ থাকার কারণেই বর্তমান এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

রুবাইয়াতের বক্তব্যের শেষে উপস্থিত উন্নয়নকর্মীরা সবাই একসঙ্গে সরকারবিরোধী স্লোগান দেন।

সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রদের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। উন্নয়নকর্মীদের কেউ কেউ শহীদ মিনারের উদ্দেশে রওনা দেন। তবে সমাবেশে অংশ নেওয়া তরুণ উন্নয়নকর্মীদের একটা অংশ পার্কের মুক্তমঞ্চ থেকেই বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি পার্কের প্রধান ফটক থেকে গুলশান-২ নম্বর চত্বরের দিকে যায়। মিছিলকারীরা সেখান থেকে গুলশান এক নম্বরের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন।

তখন মিছিলকারীদের সঙ্গে আশপাশের সাধারণ মানুষ ও কর্মজীবীরাও অংশ নিতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভ মিছিলে জড়ো হন হাজার দেড়েক মানুষ। পরে মিছিলটি গুলশান-১ নম্বর চত্বর প্রদক্ষিণ করে আবার গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে ফিরে আসে। মিছিলকারীরা তিন লেনের দুটি লেনে থেকে মিছিল করেন, একটি লেন দিয়ে যানবাহন চলতে থাকে। এ সময় গুলশান-২ ও ১ নম্বর চত্বরে পুলিশ সদস্যদের দেখা গেলেও তাঁরা মিছিলকারীদের কোনো বাধা দেননি। তবে পুলিশ দেখামাত্রই মিছিলকারীরা তাদের উদ্দেশে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দিচ্ছিলেন।