বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ অবৈধভাবে সিটি করপোরেশনের খোলা নালার সঙ্গে যুক্ত করায় কূটনৈতিক পাড়া হিসেবে পরিচিত বারিধারা এলাকায় এবার অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানে মেয়রের নির্দেশে ওই এলাকার চারটি বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ কলাগাছ ঢুকিয়ে বন্ধ করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে বারিধারা এলাকার ১১ নম্বর সড়কে এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ওই সড়কের ৮০/ক, ৩, ৭ ও ১২ নম্বর বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগে কলাগাছ ঢোকানো হয়। এ ছাড়া ৭ নম্বর বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণকারী মো. জসীমকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা আদায় করে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা জানান, বারিধারা এলাকার ৫৫০টি বাড়িতে জরিপ চালানো হয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৫টি বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ সঠিকভাবে দেওয়া আছে। আর ২০৩টি বাড়ির সংযোগ আংশিকভাবে সঠিক ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। বাকি ৩৪২টি বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ সরাসরি খোলা নালা কিংবা লেকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এতে লেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে। পাশাপাশি মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার গুলশান-২ নম্বর এলাকাতেও এই অভিযান চালানো হয়েছিল। সেদিন ওই এলাকার দুটি বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অভিযানে ক্ষোভ জানিয়ে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘একটি অভিজাত এলাকায় যদি এমন চিত্র আমাদের দেখতে হয়, তাহলে আর কী করার আছে? অভিজাত এলাকায় পয়োবর্জ্যের অবৈধ সংযোগ খুবই দুঃখজনক। বারবার বলছি সিটি করপোরেশনের খোলা নালায় পয়োবর্জ্যের সংযোগ দেওয়া যাবে না।’
মেয়র আরও বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসার পৃথক পয়োনিষ্কাশন নালায় পয়োবর্জ্যের সংযোগ দিতে হবে। যেখানে ওয়াসার সংযোগ থাকবে না, সেখানে ইটিপি প্ল্যান্ট বসিয়ে পয়োবর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করতে হবে।’
এক বছর আগে থেকে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মেয়র বলেন, কোনোভাবেই পয়োবর্জ্য বা ব্ল্যাক ওয়াটার সিটি করপোরেশনের নালায়, খালে কিংবা লেকে দেওয়া যাবে না। অনেক আগে থেকেই এ বিষয়ে সচেতন করা হয়েছে। কিন্তু তারা কথা শোনেননি। ইচ্ছাকৃতভাবে সংযোগগুলো দেওয়া হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে অভিযান চালাতে হচ্ছে।
মেয়র আরও বলেন, পয়োবর্জ্যের কারণে লেকের পানি দূষিত হয়ে গেছে। লেকে মাছ চাষ করা যাচ্ছে না। তাই মশকনিধনে প্রাকৃতিক সমাধানও সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা ওয়াসা, আইটিএন বুয়েট, হাউজিং সোসাইটির প্রতিনিধি এবং ইউনিসেফের সমন্বয়ে গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতন এলাকায় একটি জরিপ চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। এতে ওই চারটি এলাকার ৩ হাজার ৮৩০টি বাড়ির মধ্যে মাত্র ৪১টি বাড়িতে পয়োবর্জ্যের সংযোগ সঠিকভাবে পাওয়া যায়। এর বাইরে ৩ হাজার ২৬৫টি বাড়ির পয়োবর্জ্যের সংযোগ সরাসরি খোলা নালায় যুক্ত করা হয়েছে। আংশিকভাবে সঠিক আছে ৫২৪টি বাড়ির পয়ঃসংযোগ।
অভিযান নিয়ে বারিধারা সোসাইটির সভাপতি ফিরোজ হাসান বলেন, ‘সিটি করপোরেশন অভিযানে এসে আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য বড় লজ্জার ব্যাপার, আমরা লজ্জিত।’ তিনি আরও বলেন, বারিধারা ছোট এলাকা। আজকে এখানে যেসব কথাবার্তা হয়েছে, এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বসে সমাধান করা হবে। যাতে পয়োবর্জ্য আর খোলা নালায় যায়। এটি একটি চ্যালেঞ্জ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে সমাধান বের করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অভিযানে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, নারী কাউন্সিলর হাছিনা বারী চৌধুরী এবং বারিধারা সোসাইটির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।