ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখ পড়ার মতো
ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখ পড়ার মতো

ঈদের ছুটিতে দর্শনার্থীতে মুখর মিরপুর চিড়িয়াখানা

পবিত্র ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিন আজ মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরের জাতীয় চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীতে মুখর ছিল। ঈদের ছুটিতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত ও আশপাশ থেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছেন বেশির ভাগ মানুষ। দর্শনার্থীদের মধ্যে শিশুদের আধিক্য থাকলেও বড় মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

চিড়িয়াখানার প্রধান ফটকের সামনে ও চিড়িয়াখানার ভেতরের প্রতিটি রাস্তা ও পশুপাখির খাঁচার সামনে উৎসুক দর্শনার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

বেসরকারি চাকরিজীবী মো. সাইদুজ্জামান তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে রাজধানীর বাড্ডা থেকে চিড়িয়াখানায় এসেছেন। মেয়েকে খাঁচার সামনে দাঁড়িয়ে আফ্রিকান সাদা সিংহ দেখাচ্ছিলেন সাইদুজ্জামান। সেখানে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়ে চিড়িয়াখানা দেখতে চেয়েছে। তাই ঈদের আগেই চিড়িয়াখানায় আসার পরিকল্পনা করি। তা ছাড়া আমরাও (তিনি ও তাঁর স্ত্রী) কখনো চিড়িয়াখানায় আসিনি। এবার যেহেতু ঢাকায় ঈদ করছি, তাই ঘুরতে এলাম।’

সাইদুজ্জামানের মেয়ে মরিয়মের বয়স আট বছর। কিছুটা বিজয়ের হাসি নিয়ে সে বলল, ‘আজই প্রথম বাঘ–সিংহ দেখলাম।’

জিরাফের খাঁচার সামনে দর্শনার্থীদের ভিড়

অনেকে রাজধানীর আশপাশ থেকেও এখানে এসেছেন। গাজীপুর থেকে স্ত্রী ও ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছেন আবদুর রহিম। গাজীপুরে তাঁর থাই গ্লাসের দোকান আছে। আবদুর রহিম জানান, তিনি এর আগেও চিড়িয়াখানায় এসেছেন। তবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা আসেনি। তাই তাদের নিয়ে এসেছেন।

প্রায় প্রতিটি খাঁচার সামনেই দর্শনার্থীদের সরব উপস্থিতি ছিল। মেছো বিড়ালের খাঁচার সামনে দেখা যায়, প্রাণীটি দেখে একেকজন একেক মন্তব্য করছেন। একজন বলেন, ‘এটাকে আমাদের এলাকায় বনবিড়াল বলে।’ আরেকজন বললেন, ‘এটা আমাদের এলাকায়ও আছে।’ ‘এটা বাঘের চেয়ে কম নয়, ’ একজনকে এমন মন্তব্য করতে শোনা গেল।

সব বয়সী মানুষের উপস্থিতি থাকলেও চিড়িয়াখানায় যেন শিশুদের আনন্দই বেশি। টেলিভিশন, মুঠোফোন কিংবা বইয়ে দেখা প্রাণী স্বচক্ষে দেখার পাশাপাশি বাবার কাঁধে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। এমন শিশুদের একজন সুরাইয়া। তবে বাবার কাঁধে চেপে চিড়িয়াখানায় ঘুরে বেড়ানো সুরাইয়া কথা বলতে নারাজ। তার ভাই কাওছার আলী জানায়, বোনের মতো তার বয়স যখন কম ছিল, তখন সে মা-বাবার সঙ্গে একবার চিড়িয়াখানায় এসেছিল। আজকে মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে দ্বিতীয়বার চিড়িয়াখানায় ঘুরতে এল। তাদের গ্রামের বাড়ি রাজশাহী। এবার তারা ঈদ ঢাকায় করেছে।

রাইডে চড়ে মেতে ওঠে শিশু-কিশোরেরা

চিড়িয়াখানায় প্রতি ঈদে বিপুল দর্শনার্থী থাকে। সেই তুলনায় এবার দর্শনার্থী কম বলে মনে করেন জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক রফিকুল ইসলাম তালুকদার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল দর্শনার্থী কম ছিল। আজও আমাদের প্রত্যাশার তুলনায় কম। ভ্যাপসা গরম, এ কারণে দর্শনার্থী কম হতে পারে। তবে আগামী শনিবার পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় মানুষের চাপ থাকতে পারে। আজ প্রায় ৮০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে।’

চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, বাঘ, সিংহ, ভালুক, কুমির, হরিণ, হাতি, ঘোড়া, গাধা, সাপসহ এখানে ১৩৭ প্রজাতির ৩ হাজার ৪০০ পশুপাখি রয়েছে। এসব পশুপাখির মধ্যে অনেকগুলোই দেশের আর কোথাও দেখা যায় না। এত পশুপাখি একসঙ্গে দেখার সুযোগ থাকায় প্রতি ঈদে দর্শনার্থীদের ঢল নামে চিড়িয়াখানায়।