আক্রান্ত ব্যক্তিদের অনেকেই বলছেন, তাঁদের বাসার আশপাশের জায়গায় পানি জমে থাকে।
রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রায় অর্ধেক রোগীই যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা। গতকাল শনিবার হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের সঙ্গে কথা বলে ও ঠিকানা নিয়ে এ তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো।
মুগদা হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল (সকাল আটটা পর্যন্ত) হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন ৫৬ রোগী। এর মধ্যে হাসপাতালের দশম তলায় ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ৪৫ রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এ ছাড়া শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন থাকা একজনের তথ্য নেওয়া হয়েছে ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন এক মায়ের কাছ থেকে।
৪৬ ডেঙ্গু রোগীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে ২১ জন যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা; যা মোট রোগীর (৪৬ জন হিসাবে) ৪৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্য রোগীদের মধ্যে ৬ জন যাত্রাবাড়ীর পাশের কাজলা এলাকায় থাকেন।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত অন্য রোগীদের অনেকে হাসপাতালের সপ্তম তলায় শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। কেউ আবার ভর্তি ছিলেন কেবিনে। তাঁদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে যে ৪৬ ডেঙ্গু রোগীর সঙ্গে কথা বলা হয়েছে, এর মধ্যে ২১ জন যাত্রাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা; যা মোট রোগীর (৪৬ জন হিসাবে) ৪৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অন্য রোগীদের মধ্যে ৬ জন যাত্রাবাড়ীর পাশের কাজলা এলাকায় থাকেন।
ভর্তি অন্য ডেঙ্গু রোগীদের মধ্যে ৪ জন করে জুরাইন ও মুগদা এলাকার বাসিন্দা। খিলগাঁও, ধলপুর, মানিকনগর ও আরামবাগের রয়েছেন ২ জন করে। একজন করে রোগী রয়েছেন মান্ডা ও বনশ্রী এলাকার। বাকিজন (৪৬ জনের মধ্যে) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বাসিন্দা।
আক্রান্ত রোগী ও স্বজনদের বেশির ভাগেরই মত, তাঁরা যে বাসায় থাকেন, এর আশপাশে অনেক খোলা জায়গায় পানি জমে থাকে, সেখানে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র থাকতে পারে। কয়েকজন কর্মস্থলে আক্রান্ত হয়েছেন বলে ধারণা করছেন।
হাসপাতালে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ধরনের রোগীরাই মূলত জটিলতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। তবে চিকিৎসাসেবায় কোনো ঘাটতি হচ্ছে না।মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নিয়াতুজ্জামান
যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালীর বউবাজার এলাকার বাসিন্দা সেন্টু মোল্লা চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। এর আগে দুই দিন বাসায় চিকিৎসা নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার প্লাটিলেট কমে ৬৫ হাজারে নেমেছে বলে তিনি জানান। হাসপাতালে সেন্টু মোল্লার বন্ধু রাসেল হোসেন বলেন, তাঁর এলাকায় (বউবাজার) তিনি কখনো মশার লার্ভা নিধনের ওষুধ ছিটাতে দেখেননি।
পুরান ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইবনুন নাফিস চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। তিনি থাকেন আরামবাগের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন ছাত্রাবাসে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একই ছাত্রাবাসের আরও দুজন বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। এ ছাড়া ছাত্রাবাসের ভবনমালিকের ছেলের স্ত্রীও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত বলে শুনেছেন তিনি। নাফিস জানান, ওই ছাত্রাবাসের আশপাশের অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ওই হাসপাতালে ছয় দিন ধরে ভর্তি রোজিনা বেগম ও তাঁর দুই মেয়ে। আর ২০ মাস বয়সী ছোট মেয়েকে বাসায় দেখার মতো কেউ না থাকায় তাকেও সঙ্গে রাখতে হচ্ছে।
রোজিনা বেগম বলেন, এই কয়েক দিন নিজের চেয়ে সন্তানদের নিয়ে বেশি উদ্বেগে কাটছিল তাঁর। তবে আজ (গতকাল) কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন। কারণ, শিশু ওয়ার্ডে থাকা মেজ মেয়ে রুপা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। তবে বড় মেয়ে নিপার প্লাটিলেট সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ৬৫ হাজারে নেমে গিয়েছিল বলে জানালেন তিনি।
মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. নিয়াতুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, এবার হাসপাতালে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই দ্বিতীয়বারের মতো ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ ধরনের রোগীরাই মূলত জটিলতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন। তবে চিকিৎসাসেবায় কোনো ঘাটতি হচ্ছে না। তিনি জানান, চলতি বছর এই হাসপাতালে কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।
হাসপাতাল থেকে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, যেসব এলাকা থেকে রোগী আসছে, ওই সব এলাকায় প্রথমে উড়ন্ত মশা নিধন করতে হবে। এ ছাড়া এলাকাবাসীকে সচেতন করতে হবে, কারও জ্বর এলে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে এবং রোগীকে মশারির বাইরে রাখা যাবে না। আক্রান্ত বেশি হওয়ার এলাকাগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে জানালেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলেও জানান তিনি।
গতকাল সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে ৮০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৭৩ জন। এ সময় কোনো ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়নি।