ছাত্র–জনতা গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটলেও বিভিন্ন গোষ্ঠী সুযোগ খুঁজছে। তারা লুটপাট, ভাঙচুর ও হামলা চালাচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে নারীবিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি। এসব সুবিধাবাদী গোষ্ঠীর বিষয়ে ছাত্র–জনতাকে সাবধান থাকতে হবে।
ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনে আজ বুধবার রাজধানীর শাহবাগে ‘সম্প্রীতি সমাবেশে’ এসব কথা বলেন বক্তারা। দেশের ৩১টি প্রতিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে বলেন, ছাত্র–জনতা স্বৈরশাসন ও ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেখানে নানামুখী ছোবল দেখা যাচ্ছে। একদিকে সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী, আরেক দিকে মৌলবাদী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। নারীবিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে বিজয় অর্জন হয়েছে, সেখানে আরেক সাম্রাজ্যবাদী, আরেক ফ্যাসিবাদ জায়গা তৈরি করে দেওয়ার জন্য নয়। ছাত্র–জনতাকে সাবধান থাকতে হবে। সহিংসতাকে প্রতিহত করতে হবে।
জলের গানের শিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নিন্দা জানানো হয় সমাবেশ থেকে। বলা হয়, বিভিন্ন জায়গায় উদীচীর ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এ রকম পরিস্থিতি কাম্য নয়।
সমাবেশ থেকে একটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অমিত রঞ্জন দে। তাতে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা, লুটপাট, ধর্মীয় ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ধ্বংস করার অপতৎপরতা চলছে। সম্পদ দখল ও চাঁদাবাজির মতো গর্হিত তৎপরতায় কেউ কেউ যুক্ত হয়েছে। এসব অপতৎপরতা বন্ধ এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন–পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনী সব দায়দায়িত্ব গ্রহণের পরও কেন জানমাল, রাষ্ট্রীয় সম্পদ, ধর্মীয় স্থাপনা অরক্ষিত থাকল, সেই প্রশ্ন তোলেন বক্তারা। আন্দোলনকারীদের পাশ কাটিয়ে কেন শুরুতেই ধর্মীয় ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলসহ কতিপয় দল ও ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা হলো তারও সমালোচনা করেন তাঁরা। এ সবকিছুই সাম্প্রদায়িক হামলার জ্বালানি সরবরাহ করেছে কি না, সে প্রশ্নও তোলা হয়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সব ধরনের বৈষম্যের অবসান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে নারী ও সংখ্যালঘু প্রতিনিধি, অপরাধীদের সরকারে জায়গা না দেওয়া, দুর্নীতিবাজদের বিচার, সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ নিবর্তনমূলক আইন বাতিল, সাংস্কৃতিক চর্চার মুক্ত পরিবেশ, বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন করার মতো বেশ কিছু আহ্বান জানানো হয় সমাবেশ থেকে।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের মফিজুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে বীরের মতো জীবন দিয়েছে ছাত্র–জনতা। হাসিনা সরকারের মতো একই শ্রেণির ফ্যাসিবাদ আর দেখতে চায় না দেশের মানুষ।
উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি জামশেদ আনোয়ার তপনের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন পেশাজীবী হারুনর রশিদ, সিপিবির নেতা আবদুল্লাহ আল কাফি, সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ প্রমুখ। সমাবেশে বক্তব্যের পাশাপাশি গান, কবিতার আয়োজনও ছিল।