‘পিও বাবাকে ফোন দাও’ 

এ আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ১৯ জুলাই তাহির জামান রাজধানীর গ্রিন রোডে গুলিতে নিহত হন।

বাবা তাহির জামানের কোলে সাদিরা জামান
ছবি: সংগৃহীত

চার বছরের সাদিরা জামান এখনো যুক্তবর্ণ ভালোভাবে উচ্চারণ করতে পারে না। তবে তার এই আধো উচ্চারণ আরও বেশি শ্রুতিমধুর। বাবার ডাকনাম ধরে ‘পিও (প্রিয়) বাবা’ ডাক ছিল বাবা তাহির জামানের কাছে মধুর। বাবা ঘুমালে কাউকে ডাকতে দিত না। বলত, ‘পিও বাবা ঘুমায়।’

গত রোববার বুলেটবিদ্ধ নিথর বাবাকে দেখেও সাদিরার মুখে এ বাক্যই ছিল, ‘পিও বাবা ঘুমায়।’ কয়েক দিন ধরে বাবার সঙ্গে কথা হয় না। দাদিকে বলে, ‘পিও বাবাকে ফোন দাও।’ ছোট্ট সাদিরার এ কথাগুলো বলছিলেন দাদি সামসি জামান। আলোকচিত্রী তাহির জামান (২৮) ছিলেন তাঁর একমাত্র ছেলে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় ১৯ জুলাই তাহির জামান রাজধানীর গ্রিন রোডে গুলিতে নিহত হন। ঘটনার এক দিন পর তাঁর লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ থেকে সংগ্রহ করেন তাঁর স্বজন ও বন্ধুরা। রোববার বিকেলে রংপুরে তাঁকে দাফন করা হয়।

তাহির জামান একাধিক গণমাধ্যমে আলোকচিত্রী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি তথ্যচিত্র নির্মাণ করতেন; ছবি আঁকতেন। সর্বশেষ কাজ করতেন দ্য রিপোর্ট–এ। কয়েক দিন আগে সেই চাকরি ছেড়ে দেন। এ মাসেই নতুন কোনো কর্মস্থলে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছিলেন মাকে।

তাহির জামানের মা রংপুর শহরের জুম্মাপাড়ায় থাকেন। পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতায় শিশু সাদিরার মা–বাবার একসঙ্গে থাকার তেমন সুযোগ হয়নি। দুই বছর বয়স থেকেই সাদিরা দাদির কাছে থাকে। এখন রংপুরের একটি স্কুলে প্লে শ্রেণিতে পড়ছে।

বাবার সঙ্গে নিয়মিত দেখা হতো না শিশু সাদিরার। তাই বাবা নেই বিষয়টি এখনো সে বুঝতে পারছে না। 

দাদি সামসি জামান বলেন, সাদিরা প্রায়ই বলছে, ‘পিও বাবাকে ফোন দাও।’ তাকে এটা-সেটা বুঝ দিয়ে বাবার কথা ভুলিয়ে রাখেন তিনি। তাহির জামান চাইতেন, তাঁর মেয়ে বইপড়ুয়া হোক, সংস্কৃতিমনা হোক। নাতনিকে সেভাবেই বড় করতে চান বলে জানান সামসি জামান।