পোশাক বিক্রির দোকানগুলো এখন অন্য সময়ের চেয়ে রঙিন। দোকানে দোকানে লাল, কমলা, সাদা, বাসন্তী রঙের দাপট। ক্রেতাদের আগ্রহও এসব পোশাকে। বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সমাগত। আর এ উৎসবকে উপলক্ষ করেই এ ধরনের রঙের দিকে বেশি ঝুঁকছেন তাঁরা।
দুর্গাপ্রতিমা গড়াও প্রায় শেষের দিকে। আগামীকাল মঙ্গলবার দেবীর বোধন, অর্থাৎ দেবীর ঘুম ভাঙানো হবে। গত বুধবার মহালয়ার মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। শেষ দিকে এসে কেনাকাটাও জমে উঠেছে। অবশ্য অনেকেরই কেনাকাটা ইতিমধ্যে শেষ।
রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের দোকানগুলোয় পূজার পোশাকের সংগ্রহ চোখে পড়ার মতো। গতকাল রোববার দল বেঁধে তিন ভাই ও সঙ্গে দুই বন্ধু কেনাকাটা করতে এসেছেন মুন্সিগঞ্জ থেকে।
আজিজের বেশ কয়েকটি পোশাকের দোকান ঘুরে তিনজন পাঞ্জাবি কিনেছেন। বাকিরা এখনো পছন্দ করছেন ঘুরে ঘুরে। এই দলের একজন শাশ্বত মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, যাতায়াত সহজ হওয়ায় দুই বছর ধরে ঢাকায় এসেই কেনাকাটা করেন তাঁরা। বাসন্তী রঙের একটি পাঞ্জাবি তিনি কিনেছেন। বাড়ির ছোটদের জন্যও কিছু নিয়ে যাবেন।
আজিজ মার্কেটে পূজার সংগ্রহে পাঞ্জাবির ওপর বিভিন্ন রকমের ধর্মীয় মোটিফের প্রাধান্য দেখা গেল। এ ছাড়া রয়েছে নানা ধরনের ফুলেল নকশা। বিসর্গ নামের পোশাকের একটি দোকানে দেখা গেল, এক দম্পতি রং মিলিয়ে শাড়ি ও পাঞ্জাবি পছন্দ করছেন।
বিসর্গের পোশাক ডিজাইনার মো. আর ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূজার পোশাকের নকশায় সাধারণত ত্রিশূল, ওম, স্বস্তিকার মোটিফ বেশি চলে। এবারও তা–ই করা হয়েছে। বাচ্চাদের পোশাকের ক্ষেত্রে সাধারণত এসব মোটিফের পোশাক বেশি কেনা হয়। এ বছর তাঁরা প্রায় ৪০ ধরনের নকশার পোশাক করেছেন।
আজিজ মার্কেটে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় পাঞ্জাবি পাওয়া যাচ্ছে। অন্যদিকে মেয়েদের কুর্তি, সালোয়ার–কামিজ, শাড়ি হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকায় মিলছে।
নিউমার্কেটে তৈরি পোশাক বিক্রির দোকানগুলোও পূজা উপলক্ষে বাহারি ধরনের পোশাক এনেছে। সিটি ফ্যাশনের রবিউল আউয়াল প্রথম আলোকে বলেন, উৎসব উপলক্ষে একটু ঝকমকে, চুমকি, জরি দেওয়া পোশাকের চাহিদা রয়েছে।
পোশাক আগেই কেনা হয়েছে, এখন জুতা ও সাজগোজের কিছু জিনিস কিনতে নিউমার্কেটে ঘুরছিলেন সুপ্রিয়া দত্ত। একজন প্রতিবেশীকে নিয়ে বাংলাবাজার থেকে এসেছেন। সুপ্রিয়া জানান, পূজা উপলক্ষেই মূলত বাড়ির সবার জন্য বেশি করে পোশাক কেনা হয়। এবারও তা–ই করেছেন। তবে পোশাকের দাম তাঁর কাছে অনেক বাড়তি মনে হয়েছে।
শ্রেয়সী পাল ও সুস্মিতা পাল বসুন্ধরা সিটির দেশি দশে ঘুরছিলেন। নিজেদের কেনাকাটা শেষ। তবে বাবার পাঞ্জাবি কেনা নিয়ে দোটানায় আছেন। দেশি দশ থেকে নেবেন নাকি আড়ং থেকে, তা নিয়ে দুই বোন দোনামনায় আছেন। শ্রেয়সী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছরই পূজার পোশাকে লাল–সাদা রংকে প্রাধান্য দেন। এবার নিয়েছেন শাড়ি। এ ছাড়া বিভিন্ন পোশাকের ব্র্যান্ডে নানা ছাড় চলছে। সে সুযোগও কাজে লাগিয়েছেন।
বৃষ্টির কারণে শুক্র ও শনিবার কেনাকাটা করার সুযোগ পাননি অয়ন সরকার ও পিয়া সরকার দম্পতি। তাই অফিস থেকে ঘণ্টাখানেকের ছুটি নিয়ে দুজন কেনাকাটার জন্য বেরিয়েছেন। অয়ন জানান, তাঁরা সিলেটে নিজেদের বাড়িতে পূজা উদ্যাপন করবেন। সিলেটে থাকা পরিবারের বাকি সদস্যদের জন্য আগেই কেনাকাটা সেরেছেন। এবার নিজেরা কিনবেন। দুজনেরই ইচ্ছা কাছাকাছি রঙের মধ্যে মিলিয়ে পোশাক কেনার।