আগামী নির্বাচনে সংখ্যালঘুবিরোধী ও হিন্দুবিরোধী অনেকেই মনোনয়ন পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনোনয়ন পেয়েছেন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে সংখ্যালঘুবিরোধী, হিন্দুবিরোধী, যাঁরা দুর্নীতি করছেন, নানাভাবে লুটতরাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন।’
‘নির্বাচনে সহিংসতা: উত্তরণের পথ’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় সুলতানা কামাল এ কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপে এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো সহিংসতা হচ্ছে এবং নির্বাচন বা পূজার মতো বিশেষ সময়ে সেটি আরও তীব্রতর হয় বলে মন্তব্য করেন সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘কেবল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতা হয়, তা নয়। আমরা আসলে একটা সহিংস সমাজের মধ্যে বাস করছি। প্রতিটি মানুষ আজকে সহিংসতার শিকার। কিন্তু যার শক্তি কম, যারা প্রতিবাদ কম করতে পারে, তাদের ওপর অত্যাচার অনেক বেশি হয়। কারণ অত্যাচারী জানে, এখানে সহিংসতা করলে সে পার পেয়ে যাবে। পার পেয়ে যায় বলে সংখ্যালঘু নির্যাতন বেশি হয়।’
শুধু নির্বাচনের সময় না, পূজার সময় না, বছরের ৩৬৫ দিন ২৪ ঘণ্টা সবার নিরাপত্তার দাবি জানান সুলতানা কামাল।
এই সভায় সুলতানা কামালের আগে বক্তব্য দেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। তিনি বলেন, ‘একটি মহল বলে যে বিএনপি আমলে সাম্প্রদায়িকতা ছিল, আওয়ামী লীগ আমলেও আছে। সুতরাং এই গ্রুপকে বাদ দিয়ে একটা কিছু করতে হবে। তাহলে বিকল্প কোথায়? এখন আমাদের মন্দের ভালো আওয়ামী লীগ।’
শাহরিয়ার কবিরের এ কথার জবাবে সুলতানা কামাল বলেন, ‘মন্দের ভালো দিয়ে তো আমার কোনো লাভ হচ্ছে না। আমার মধ্য থেকে তো শঙ্কা দূর করতে পারছি না যে না, রাষ্ট্রের একজন অভিভাবক আছেন, যিনি থাকাতে আমাকে শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে না। মন্দের ভালো নিয়ে যদি আমাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয় সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়।’
সভায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের অন্তত ১০ জন এমপি মনোনয়ন পেয়েছেন, যাঁরা সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। সভায় শ্যামল দত্ত বলেন, আওয়ামী লীগের পক্ষে আর কোনো দিনই সম্ভব হবে না রাষ্ট্রধর্ম সরানো।
এখন নির্বাচনে আর সংখ্যালঘুদের ভোট প্রয়োজন হয় না মন্তব্য করে শ্যামল দত্ত বলেন, ‘আমাদের (সংখ্যালঘু) এখানে তো এখন ভোটও লাগছে না। আমাদের গুরুত্বও তো নাই। আপনি যে ৮ দশমিক ৯ ভাগ ভোট দেবেন, সেটাও তো প্রয়োজন হচ্ছে না। সুতরাং যতক্ষণ পর্যন্ত এই সংস্কৃতির পরিবর্তন না হয়, ততক্ষণ এর সমাধান হবে না।’
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি জে এল ভৌমিকের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর (মানিক), প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের সদস্যসচিব অধ্যাপক মামুন আল মাহাতাব।