সরদার ফজলুল করিম স্মরণসভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক এম এম আকাশ। ঢাকা, ২৯ জুন
সরদার ফজলুল করিম স্মরণসভায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক এম এম আকাশ। ঢাকা, ২৯ জুন

সরদার ফজলুল করিম সাম্য, মানবতার আদর্শ লালন করতেন

সরদার ফজলুল করিম ছিলেন আশাবাদী মানুষ। তিনি ছিলেন আদর্শ ও লক্ষ্যে অবিচল। মানুষের ওপরে আস্থা হারাননি। সারা জীবন সাম্য, মানবতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লালন করেছেন। তার আদর্শের চর্চা করে নতুন প্রজন্ম একটি মানবিক উদার সমাজ গঠনে অনুপ্রাণিত হতে পারবে।

রাজধানীতে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেনদিয়ার জাহেদ মিলনায়তনে এন স্মরণসভায় সরদার ফজলুল করিমকে এভাবেই স্মরণ করলেন বক্তারা। আজ শনিবার বিকেলেই মনীষী সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।

প্রচলিত রীতির চেয়ে ভিন্নতর ছিল এই স্মরণসভার আয়োজন। সভায় কোনো সভাপতি ছিলেন না। নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও গবেষকেরা সরদার ফজলুল করিমের বিভিন্ন বই পড়ে নিজেদের উপলব্ধির আলোকে বইটির বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেছেন প্রথম পর্বে। এর ফাঁকে ফাঁকে ছিল কবিতা আবৃত্তি আর যন্ত্রানুষঙ্গ ছাড়া গান, বিশিষ্টজনের বক্তৃতা  ও শেষে মুক্ত আলোচনা দিয়ে সাজানো হয়েছিল অনুষ্ঠান।

শুরুতেই অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার সরদার ও তাঁকে নিয়ে স্মৃতি পরিষদের কার্যক্রম সম্পর্কে পরিচিতি তুলে ধরে এই অনুষ্ঠানের ধারাক্রম সম্পর্কে বিবরণ দেন। তিনি জানান, স্মৃতি পরিষদের পক্ষে সদার ফজলুল করিমের নামে একটি ওয়েবসাইট ও তার রচনার ইংরেজি অনুবাদের কাজ শুরু হয়েছে।

মনীষী সরদার ফজলুল করিম স্মৃতি পরিষদ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইসফেনদিয়ার জাহেদ মিলনায়তনে স্মরণসভার আয়োজন করে। ঢাকা, ২৯ জুন

আলোচনা পর্বে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, মানুষের কাছে ক্ষমতাই এখন মুখ্য হয়ে উঠছে। যেকোনোভাবে ক্ষমতাবান হওয়া, সম্পদশালী হওয়ার জন্যই সবাই ব্যতিব্যস্ত। কিন্তু সরদার ফজলুল করিমেরা তাঁদের সময় আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন সমাজে সাম্য, শান্তি, স্বাধীনতার প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি সরদারের রচনাকে দেশের তরুণ সমাজের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পাঠাগার আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার জন্য স্মৃতি পরিষদকে পরামর্শ দেন।

অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য মেহনতি মানুষকেই আন্দোলন করতে হবে। মধ্যবিত্তরা এ ক্ষেত্রে তাদের জ্ঞানের সহায়তা দিতে পারে; কিন্তু মধ্যবিত্তরা এখন সেই কাজ করতে চাচ্ছে না। তারা চেষ্টা করছে ওপরে উঠতে, উচ্চবিত্ত হতে। তিনি বলেন, সরদার ফজলুল করিম এসব নিয়ে কখনো হতাশ হতেন না। যেকোনো পরিস্থিতিতেই তিনি আশাবাদী থাকতেন।

সরদার ফজলুল করিমের প্রজ্ঞার বিষয়ে এম এম আকাশ বলেন, তিনি শান্ত থেকে সব ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ছিলেন ‘চলন্ত বিশ্ববিদ্যালয়’। সংসারের অশান্তি বা শারীরিক সমস্যা কোনো কিছুই তাঁকে নিষ্ক্রিয় রাখতে পারেনি। তিনি সব সময় পরিশ্রম করেছেন, পড়েছেন, লিখেছেন, নতুন জিনিস শিখেছেন। সরদার ফজলুল করিম বলেছেন, সবাইকে স্বপ্ন দেখতে হবে; এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ খুঁজতে হবে। তিনি এ কারণেই তরুণ প্রজন্মের কাছে বাতিঘর হয়ে আছেন। তিনি যে পথে ডাক দিয়েছিলেন, সেই পথ ধরে এগিয়ে গেলে সমাজে সাম্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।

আলোচনা পর্বে আরও অংশ নেন লেখক মনিরুল ইসলাম, নায়েমের উপপরিচালক স্বপন নাথ, প্রথমা প্রকাশনের পাণ্ডুলিপি সম্পাদক আনিসুর রহমান। বক্তারা তাঁদের আলোচনা ও স্মৃতিচারণায় সরদার ফজলুল করিমের জীবনসাধনা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, কারাজীবন, দর্শনচর্চার নানা দিক তুলে ধরেন।

নতুন প্রজন্মে গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন গবেষক ঋতু চক্রবর্তী, সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইসা আশরাফ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুস্মিতা বণিক ও জাহিদ হাসান। আবৃত্তি করেন শাহাদাত হোসেন ও ফয়জুল আলম, সিলেট অঞ্চলের নাগরী ভাষায় সংগীত পরিবেশন করেন হরেন্দ্র নাথ সিং। পরে শ্রোতাদের মধ্যে অনেকেই মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।