ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনের তুলনায় গভীর নলকূপ কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
তীব্র গরমের এই সময়ে রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে আদাবর, শেখেরটেক, জুরাইন, মুরাদপুর, নন্দীপাড়া, বাড্ডা ও বনশ্রী এলাকায় সমস্যা বেশি। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, কিছু জায়গায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া, অতিরিক্ত গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়া এবং প্রয়োজনের তুলনায় গভীর নলকূপ কম থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটিতে অনেক দিন ধরে পানির সমস্যা। এই এলাকার বাসিন্দা খাইরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, রোজায় পানির কষ্ট বেশি হচ্ছে। সাহ্রি ও ইফতারের জন্যও দোকান থেকে পানি কিনে আনতে হচ্ছে। ওয়াসার অফিসে পানির গাড়ির জন্য ফোন করলে পরের দিন গাড়ি আসে।
বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৩ (লালমাটিয়া জোন)–এর অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, আদাবর এলাকায় পানির সংকট মূলত গভীর নলকূপের অভাবে৷ এই এলাকায় আরও অন্তত দুটি গভীর নলকূপ প্রয়োজন। কিন্তু নলকূপ বসানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
গত সোমবার ঢাকা ওয়াসা গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ গ্রহণ করেছে ৪০৪টি। এর মধ্যে ৩০০টি অভিযোগই মডস জোন-৩–এর। সেদিন ঢাকা ওয়াসার কাছে গাড়িতে করে পানি সরবরাহের চাহিদা আসে ১ হাজার ২২৪টি। এর মধ্যে ৭২৩ গাড়ি পানি সরবরাহ করতে পেরেছে ঢাকা ওয়াসা। অর্থাৎ পানিসংকটে থাকা বাসাবাড়িগুলোয়ও শতভাগ পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা।
রোজায় পানির কষ্ট বেশি হচ্ছে। সাহ্রি ও ইফতারের জন্যও দোকান থেকে পানি কিনে আনতে হচ্ছে। ওয়াসার অফিসে পানির গাড়ির জন্য ফোন করলে পরের দিন গাড়ি আসে।খাইরুজ্জামান, বাসিন্দা, বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি, আদাবর
ঢাকা ওয়াসার ১০টি মডস জোনে পানির গাড়ির চাহিদা জানানো হলে গাড়িতে করে পানি বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট বাড়ায় ওয়াসার পানির গাড়ির চাহিদাও বেড়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি সরবরাহ করতে পারছে না ঢাকা ওয়াসা। ফলে পানির সংকটে থাকা বাসিন্দাদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।
ঢাকা ওয়াসার প্রতিটি ছয় হাজার লিটারের বড় গাড়ির পানির দাম ৬০০ টাকা। অনেক গ্রাহকের অভিযোগ, তাঁরা পানির গাড়ির জন্য আগাম চাহিদা দিলেও নির্ধারিত সময়ে পাচ্ছেন না। আবার সিরিয়াল এগিয়ে এনে দ্রুত গাড়ি পেতে হলে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়।
ঢাকা ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদন প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্ট্যান্ডবাইসহ ওয়াসার মোট পাম্প রয়েছে ১ হাজার ৬১টি। এর মধ্যে নিয়মিত পাম্প চালু থাকছে ৯১৪টি আর স্ট্যান্ডবাই পাম্প চালু থাকছে ১৪২টি। কয়েকটি স্ট্যান্ডবাই পাম্প বন্ধ রয়েছে। এসব পাম্পে উৎপাদিত হচ্ছে ২৯০ থেকে ২৯৩ কোটি লিটার পানি। ওয়াসার দাবি, ঢাকায় পানির যে চাহিদা, উৎপাদন তার চেয়ে বেশি। কিন্তু সব এলাকায় ‘রেশনিং’ করার ব্যবস্থা না থাকায় কিছু জায়গায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এক এলাকায় পানির সংকট দেখা দিলে বা গভীর নলকূপ নষ্ট হলে আশপাশের এলাকা থেকে পানি এনে চাহিদা মেটানো হয়। একে ‘রেশনিং’ বলা হয়।
ঢাকা ওয়াসার মডস জোন-৬–এর অন্তর্ভুক্ত নন্দীপাড়া-বনশ্রী এলাকায় পানির সমস্যা রয়েছে। গত সোমবার এই জোনে ২২৬টি গাড়ির চাহিদা ছিল। কিন্তু ঢাকা ওয়াসা সরবরাহ করতে পেরেছে মাত্র ৬১ গাড়ি পানি। ফলে যাঁদের বাড়িতে পানির সমস্যা চলছে, তাঁরা ওয়াসাকে জানিয়েও চাহিদা মোতাবেক পানি পাচ্ছেন না।
মেরুল বাড্ডার আলিফনগর এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে পানির সংকট তীব্র। আলিফনগরের পুরাতন মসজিদ এলাকার বাসিন্দা মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, অত্যধিক গরম ও রোজার মধ্যে পানির কষ্ট বেশি হচ্ছে। তিন দিন ধরে বাসার কেউ গোসল করতে পারেনি। এক গাড়ি পানির জন্য ওয়াসাকে বলা হয়েছিল, দুই দিনেও আসেনি।
পানিসংকটের বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম সহিদ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কিছু জায়গায় পানির সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। গরমে পানির ব্যবহার বেড়ে গেছে। কিছু জায়গায় গভীর নলকূপের উৎপাদনও কমে গেছে। বৃষ্টি হলে এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আদাবর, শেখেরটেক ও বায়তুল আমান এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনের জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।
ওয়াসার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কোনো এলাকায় পানির সমস্যা হলে ঢাকা ওয়াসার হটলাইন নম্বর ১৬১৬২-তে যোগাযোগ করতে হবে। ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পানির সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।
২০১০ সালে ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত পানির ৮০ শতাংশ ছিল ভূগর্ভস্থ উৎসের। আর ২০ শতাংশ ছিল ভূ-উপরিভাগের পানি। সংস্থাটি ২০২১ সালের মধ্যে ভূ-উপরিভাগের পানির উৎপাদন অন্তত ৭০ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়। তবে এই লক্ষ্য অর্জন করা যায়নি। এখনো ওয়াসার দৈনিক উৎপাদিত পানির ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই ভূগর্ভস্থ উৎসের।