ইউএনএফপিএর সহযোগিতায় আয়োজন ‘কথা হোক: বাবা–মেয়ের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে কথা বলেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা ও তাঁর বাবা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। মঙ্গলবার প্রথম আলোর কার্যালয়
ইউএনএফপিএর সহযোগিতায় আয়োজন ‘কথা হোক: বাবা–মেয়ের গল্প শুনি’ অনুষ্ঠানে কথা বলেন অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা ও তাঁর বাবা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। মঙ্গলবার প্রথম আলোর কার্যালয়

বাবা-মেয়ের গল্প শুনি

মেয়েকে নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্যে পাত্তা দেন না ভাবনার বাবা

স্ত্রী ও দুই কন্যাসহ বন্ধুর পরিবারের সঙ্গে চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়েছিলেন হাবিবুল ইসলাম হাবিব। বাঘের গর্জন শুনে তাঁর বড় মেয়ে সেদিকে দেয় ছুট। মেয়েকে খুঁজে না পেয়ে তিনি ভেবেছিলেন কেউ হয়তো ফোন করে মুক্তিপণ চাইবে। ফোন ঠিকই এসেছে, তবে তাতে পেয়েছেন মেয়ের খোঁজ। এই বাবার জীবনে ক্ষণিকের জন্য মেয়েকে হারানোর এ স্মৃতি খুব কষ্টের। আবার ফিরে পাওয়াটা ভীষণ আনন্দের।
নির্মাতা ও সংস্কৃতিকর্মী হাবিবুল ইসলামের মতে, তাঁর বড় মেয়ে কিছুটা জেদি।

পাশাপাশি তিনি সমাজ, মানুষ, বন্ধু ও পরিবার নিয়ে বেশ ভাবেন। এই মেয়ে অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনা। বললেন, তাঁর ভাবনা অনুযায়ীই বেড়ে উঠেছেন মেয়ে। ভাবনার মতে, বাবা তাঁর ‘বেস্ট ফ্রেন্ড’।

‘কথা হোক: বাবা-মেয়ের গল্প শুনি’ আয়োজনে হাবিবুল ইসলাম ও আশনা হাবিব ভাবনা গল্পে গল্পে এসব কথা জানালেন। প্রথম আলো ডটকমের সহযোগিতায় জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ‘সেলিব্রিটিং ডটার্স’ ক্যাম্পেইনের আওতায় বিশেষ এ উদ্যোগের একটি পর্ব আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

বাবার সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভাবনা জানালেন, বাবার জন্য যেকোনো কিছুই করতে পারেন তিনি। বাবা এমনই একজন মানুষ, যাঁকে সব বলতে পারেন। মন খারাপ হলেও বাবা যেন কীভাবে বুঝে যান। স্কুলে একবার গণিতে খারাপ ফল হয়। ভাবনার মন খারাপ। কান্নাকাটি অবস্থা। হাবিবুল ইসলাম মেয়েকে বলেছিলেন, ‘আরে, এটা কোনো বিষয়ই না।’

বাবার সঙ্গে ভাবনার বন্ধুত্বের কিছু টুকরো গল্প শোনান হাবিবুল ইসলাম। পঞ্চম শ্রেণিতে থাকতে ভাবনার পিরিয়ড হয়। সঙ্গে সঙ্গে তিনি বাবাকে ডেকে এ কথা জানান। ভাবনা যতবারই প্রেমে পড়েছেন, বাবা তা জেনেছেন। হাবিবুল ইসলাম তাঁর মেয়েকে কখনো বলেননি, তোমাকে বিয়ে করতে হবে। জানালেন, ছোট থেকেই ভাবনা এটা জেনে বড় হয়েছেন যে বিয়েই তাঁর জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েকে নিয়ে নানা রকম আলোচনা–সমালোচনা হয়, সেগুলোকে কীভাবে দেখেন হাবিবুল ইসলাম? দর্শক সারি থেকে এমন প্রশ্নের জবাবে এই বাবা জানান, সবকিছুই তাঁর চোখে পড়ে। কিন্তু তিনি গুরুত্ব দেন না। তাঁর মতে, যাঁরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা, নেতিবাচক মন্তব্য করেন, তাঁরা পূর্ণ মানুষ নন।

হাত ধরে যখন স্কুলে নিয়ে যেতেন, তখন পথেই ভাবনাকে একটু একটু করে গল্পে গল্পে হাবিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, কোন বয়সে কী হয়, কী করা ভালো, কী করা খারাপ। মানুষকে তিনি খুব অনুভূব করেন। মেয়েদের বড় করার ক্ষেত্রেও তিনি চেষ্টা করেছেন বলে জানালেন।

গল্পের শেষ দিকে এসে ভাবনা জানান, তিনি খুব পরিবারঘনিষ্ঠ। যেকোনো উৎসব পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে উদ্‌যাপন করেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে এই অভিনেত্রী বলেন, বাবা–মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে, দূরত্ব রাখা যাবে না।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাবনা ও তাঁর বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান প্রথম আলোর ইংরেজি বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির এবং অনুষ্ঠান সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান রওশন।  
‘সেলিব্রিটিং ডটার্স’ ক্যাম্পেইনের এই বিশেষ উদ্যোগে বাবা–মেয়ের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশ করতে পরস্পরকে চিঠি লেখার ‘কথা হোক’ নামের আয়োজনে পাঠকও অংশ নিতে পারবেন।

পাঠক তাঁর কন্যা/বাবার উদ্দেশে লেখা চিঠি celebratingdaughters.pro এই ওয়েব ঠিকানায় জমা দিতে পারবেন অথবা ayojon@prothomalo.com– এই ঠিকানায় ই–মেইল করতে পারবেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চিঠি পাঠানো যাবে। বাছাই করা চিঠি নিয়ে প্রকাশিত হবে বই। এ ছাড়া সেরা চিঠি লেখকদের জন্য বিশেষ পুরস্কারও থাকছে।