পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব

ঢাকার শেষ পর্বে জিনজিরার বালিকারা জিতে নিল বিজয়ীর ট্রফি

যুক্তিতর্কে একের পর এক প্রতিপক্ষ দলকে পরাস্ত করে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতে নিয়েছে জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দল
ছবি: দীপু মালাকার

শুক্রবার ছুটির দিন হলেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর আফতাব নগরের ইম্পিরিয়াল কলেজ মুখর হয়েছিল বিতর্কের যুক্তিতর্কে। সকাল ১০টায় এখানে শুরু হয় পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব-২০২৩-এর রামপুরা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

যুক্তিতর্কে একের পর এক প্রতিপক্ষ দলকে পরাস্ত করে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতে নিয়েছে জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দল। বিজয়ী দলের বিতার্কিক ছিল দুর্দানা জওহর, মৌরানী শিব, সিনথিয়া তাসনিম ও মীনহা হক। এই জয়ের মধ্য দিয়ে তারা পৌঁছে গেছে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। রানার্সআপ হয়েছে মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় দল। বারোয়ারি বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও কলেজের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাসিয়া রহমান।

কুইজ প্রতিযোগিতায় নিম্নমাধ্যমিক স্তরে (ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি) প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোহাম্মদ হোসেন ও জাওয়াদ আলম এবং তৃতীয় হয়েছে খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের আয়মান সাবির মাহমুদ। তারা সবাই সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাধ্যমিক স্তরে (নবম-দশম শ্রেণি) প্রথম হয়েছে ভিকারুন নিসা স্কুল ও কলেজের যারীন তাসনিম, দ্বিতীয় হয়েছে সাউথ পয়েন্ট স্কুল ও কলেজের তাসনিয়া নাওয়ার এবং তৃতীয় হয়েছে আনন্দ নগর স্কুল ও কলেজের সুমাইয়া আক্তার।

এই রামপুরা অঞ্চলের এই প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ঢাকা অঞ্চলের স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা পর্ব শেষ হলো।  

চূড়ান্ত পর্বের বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিতার্কিক উত্তম রায়। বিচারক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিতার্কিক জাহিদ হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক বিতার্কিক মুশফিক সালেহীন, সাইমুন মৌসুমি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিক সুস্মিতা বণিক। সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার ঢাকা মহানগরের উপদেষ্টা সৈয়দ রশিদুল হাসান।

এর আগে সকালে ‘যোগ দাও যুক্তির মেলায়’ স্লোগান নিয়ে বিতর্ক উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল ইম্পিরিয়াল কলেজের নিচতলার মিলনায়তনে। একটু ব্যতিক্রমী আঙ্গিকের এই অনুষ্ঠানে উৎসবে অংশ নেওয়া দুই কনিষ্ঠ বিতার্কিক রাজধানী আইডিয়াল স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ফাহিম মাহমুদ ও কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজী সালমান উদ্বোধন ঘোষণা করে।

পরে অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও বিতর্ক উৎসবের সমন্বয়ক সাইদুজ্জামান রওশনের আহ্বানে প্রতিযোগী সবাই মিলে মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির উদ্দেশে চিৎকার দিয়ে বলে, ‘মা, তোমাকে ভালোবাসি।’ পরে তারা একইভাবে বাবার উদ্দেশেও চিৎকার দিয়ে বলে, ‘বাবা, তোমাকে ভালোবাসি।’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিতর্কের নিয়ম সম্পর্কে প্রতিযোগীদের সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি উত্তম রায়। বিতর্ক উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা, প্রচার সহযোগী নাগরিক টেলিভিশন।

প্রতিযোগিতায় রামপুরা এবং পুরান ঢাকা ও কেরানীগঞ্জের ১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দেড় শ প্রতিযোগী অংশ নেয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরুর আগেই প্রতিযোগীরা তাদের স্কুলের শিক্ষক, প্রশিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে অনুষ্ঠানকেন্দ্রে চলে আসে। তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনায় প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পরিবেশে। মধ্যাহ্নবিরতির পর চূড়ান্ত পর্ব শুরুর আগে শিক্ষার্থীদের অনেকে গান গেয়ে শোনায়।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো খিলগাঁও স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জিনজিরা পীর মোহাম্মদ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, খিলগাঁও সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়, মহাখালী মডেল হাইস্কুল, ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, কিশোরী লাল জুবিলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলাদেশ ব্যাংক উচ্চবিদ্যালয়, রাজধানী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং আনন্দনগর আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

মোট চারটি পর্বে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। দলীয় বিতর্কের পাশাপাশি দুপুর থেকে শুরু হয়  ‌‘বারোয়ারি বিতর্ক’ (একক প্রতিযোগীভিত্তিক) আর নিম্নমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য কুইজ প্রতিযোগিতা। এতেও চূড়ান্ত পর্যায়ের বিজয়ীরা অংশ নেবে জাতীয় প্রতিযোগিতায়।

বিতর্ক অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা

প্রথম পর্বে বিতর্কের বিষয় ছিল, ‘মাদকমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে পরিবার নয়, শিক্ষকের ভূমিকাই প্রধান’। দ্বিতীয় পর্বের বিষয়, ‘তথ্যপ্রযুক্তির অধিক ব্যবহার পাঠাভ্যাস নষ্ট করছে’। তৃতীয় পর্বের বিষয়, ‘শিশুদের অনলাইন নেতিবাচক আচরণের জন্য প্রধানত অভিভাবকেরাই দায়ী’ এবং চূড়ান্ত পর্বের বিষয় ছিল, ‘প্রাথমিক পর্যায়েই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্রীড়াশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা উচিত।’

উল্লেখ্য, এবার সারা দেশে পুষ্টি-প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল ২৭ মে ঢাকার সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ থেকে। রাজধানী ঢাকায় ৫টি এলাকাসহ দেশের ৩৫টি জেলায় এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রতিটি জেলার শ্রেষ্ঠ দল ও ঢাকার পাঁচটি সেরা দল নিয়ে হবে জাতীয় পর্যায়ের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতা।