ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পুরোনো পত্রিকার আর্কাইভটি যেন ইতিহাসের ‘জাদুঘর’। সত্তর বা তার আগের সময়কার দৈনিক পত্রিকাও এখানে রয়েছে। তাই গ্রন্থাগারের এই অংশের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক ও সাংবাদিকদের বিশেষ আগ্রহ দেখা যায়। কিন্তু ২০১৩ সালের শেষের দিক থেকে আর্কাইভটির ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের পত্রিকা দেখা অলিখিতভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি তা উন্মুক্ত করা হয়েছে।
গ্রন্থাগারের কর্মকর্তাদের দাবি, কোনো বিশেষ নির্দেশের কারণে ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালের পত্রিকাগুলোর প্রদর্শন বন্ধ ছিল, এমন নয়। স্বাধীনতাপরবর্তী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন প্রথম সরকারের সময়টা নিয়ে পাঠকের আগ্রহ বেশি ছিল। তাই অনেকে এসেই এসব পত্রিকা খুলে দেখতেন। কিন্তু পত্রিকাগুলোর অবস্থা এতই নাজুক হয়ে পড়েছিল যেন ধরলেই ছিঁড়ে যাবে। এ কারণেই সেগুলো আলাদা করে রাখা হয়েছিল।
এই প্রতিবেদক গত বছরের ডিসেম্বর ও চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কয়েক দফায় গ্রন্থাগারের পুরোনো পত্রিকার আর্কাইভে গিয়েছিলেন। তখন সেখানে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের পত্রিকাগুলো না থাকলেও তার আগের অনেক পত্রিকার বাঁধাই করা বান্ডিল ছিল। এমনকি ১৯৫৪ ও ১৯৫৫ সালের কিছু পত্রিকার সংখ্যাও ছিল। এখনো সেগুলো সেখানে রয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে গ্রন্থাগারের পুরোনো পত্রিকার আর্কাইভ শাখায় গিয়ে দেখা যায়, এক শিক্ষার্থী ১৯৭৪ সালের পত্রিকার বিভিন্ন সংখ্যা খুলে দেখছেন। এ অবস্থায় দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তার কাছে আগ্রহ প্রকাশ করলে তিনি এই প্রতিবেদককে উন্মুক্ত হওয়া ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালের পুরোনো পত্রিকাগুলো দেখান। সেখানে দৈনিক ইত্তেফাকের ১৯৭৩, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালের সংখ্যাগুলো দেখা যায়। মাসের ভিত্তিতে এগুলো বাঁধাই করে রাখা হয়েছে। দৈনিক সংবাদের ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ সালের কিছু সংখ্যাও সেখানে আছে। ইংরেজি দৈনিক দ্য বাংলাদেশ অবজারভারের ১৯৭৩, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালের কয়েকটি সংখ্যাও দেখা গেছে।
গ্রন্থাগারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালের পুরোনো পত্রিকা উন্মুক্ত করার বিষয়ে কথা হয়। তাঁরা জানান, ২০১৪ সালের আগে থেকেই গ্রন্থাগারে ১৯৭২ থেকে ৭৫ সালের পত্রিকা প্রদর্শন অলিখিতভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এর জন্য বিভিন্ন সময় ‘টেকনিক্যাল সমস্যা’র কথা বলা হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও গবেষকদের ওই সময়ের পত্রিকার স্ক্যানড কপি প্রিন্ট করে দেওয়া হতো। তবে কোনোভাবেই মূল সংখ্যাগুলো দেখার সুযোগ ছিল না।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সহকারী গ্রন্থাগারিক (টেকনিক্যাল) মো. রাসেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের পত্রিকার সংখ্যাগুলো দেখতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা বেশি। এতে পত্রিকাগুলোর অবস্থা এতই নাজুক হয়ে পড়েছিল যেন ধরলেই ছিঁড়ে যাবে। এ জন্য এগুলো আলাদা করে রাখা হয়েছিল।
এই কর্মকর্তা জানান, পুরোনো সব পত্রিকার আর্কাইভ ডিজিটালাইজেশনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের পত্রিকাগুলোও রয়েছে। এখন কেউ চাইলে গ্রন্থাগারে এসে পুরোনো ছাপা সংখ্যার পাশাপাশি সফট কপিও দেখতে পারবেন। চাইলে প্রিন্টও সংগ্রহ করতে পারবেন।