যাত্রীর অভাবে টার্মিনাল ফাঁকা, দূরপাল্লার বাস চলেছে হাতে গোনা

গাবতলী বাস টার্মিনাল অনেকাই ফাঁকা। বেলা সাড়ে তিনটা, ৬ জানুয়ারি ২০২৪
ছবি: প্রথম আলো

টার্মিনাল অনেকটাই ফাঁকা। যে কয়েকজন রয়েছেন, তাঁদের কেউ বাস কোম্পানির প্রতিনিধি, কেউবা কর্মী, চালক কিংবা তাঁর সহকর্মী। টিকিট বিক্রির বেশির ভাগ কাউন্টারও বন্ধ। যেগুলো খোলা, সেগুলোর ভেতরে কোনো প্রতিনিধি নেই। আবার বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন, এমন মানুষের সংখ্যাও ছিল হাতে গোনা।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই টার্মিনালে থাকা বিভিন্ন বাস কোম্পানির প্রতিনিধি ও পরিবহনকর্মীরা জানান, সকাল থেকেই যাত্রীর উপস্থিতি হাতে গোনা। তাই বেশির ভাগ কোম্পানির বাস আজ চলেনি। যে কটা ছেড়ে গেছে, সেই সংখ্যা নগণ্য।

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে গাবতলী টার্মিনালে কথা হয় যমুনা ডিলাক্স পরিবহনের প্রতিনিধি শাহ আলমের সঙ্গে। গাবতলী থেকে আরিচা ঘাট হয়ে বাসটি বরিশাল, যশোর, সাতক্ষীরা ও শ্যামনগর যায়। যাত্রীর অপেক্ষায় হাতে কয়েকটি টিকিট নিয়ে কাউন্টারের বাইরে রাস্তার দিকে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন।

শাহ আলম জানান, স্বাভাবিক সময়ে সকাল ৮টা থেকে সারা দিনে তাঁদের কোম্পানির ১২-১৫টি গাড়ি ছাড়া হয়। আজ সকাল থেকে বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত একটিও বাস ছাড়া হয়নি। কারণ, যাত্রী ছিল না। যে কজন যাত্রী এসেছেন, তাঁরাও হানিফ এন্টারপ্রাইজ অথবা শ্যামলী পরিবহনে চলে গেছেন। হরতালের প্রভাবে গাবতলী পুরো অসহায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

গাবতলীতে হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি টিকিট কাউন্টারের প্রতিনিধি কাওসার আহমেদ প্রথম আলোকে জানান, সারা দিনে (বেলা তিনটা পর্যন্ত) যাত্রীর অভাবে তাঁরা মাত্র একটি বাস ছেড়েছেন। সেটাও সকাল ছয়টায়। বাসটি ২১ জন যাত্রী নিয়ে খুলনায় গেছে।

টিকিট বিক্রির কাউন্টার খোলা ছিল দু–একটি

বিকেল সাড়ে পাঁচটায় আরেকটি বাস ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জানিয়ে কাওসার আহমেদ বলেন, বাসটি পাইকগাছা যাবে। এতে ২৭ জন যাত্রী পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভারতের একটি ট্যুরিস্ট দলের সদস্যরা আছেন; যাঁরা ফরিদপুরে যাবেন। এ ছাড়া রাত ১০টা ও সাড়ে ১০টায় দুটি বাস ছাড়ার সূচি রয়েছে। তবে একটি আসনও বুকিং কিংবা বিক্রি হয়নি। যাত্রী না থাকলে সেগুলো ছাড়া হবে না বলেও জানান তিনি।

তবে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে কিছুটা ভিন্ন চিত্র দেখা গেল। দেখা যায়, টার্মিনালের সামনে বেশ কিছু যাত্রীর জটলা। বাস ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিরাও যাত্রীদের ডাকাডাকি করছিলেন। টার্মিনালের ভেতরে থাকা কাউন্টারগুলো বন্ধ থাকায় যাত্রীরাও যেখান থেকে বাস ছাড়া হয়, সে অংশেই দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন।

অপেক্ষমাণ যাত্রীরা জানান, টিকিট কেটে কিংবা বাসের ভেতর আগে বসে থেকে কোনো লাভ নেই। কারণ, আগেই বলা হচ্ছে, অন্তত ২০ জন যাত্রী হলে বাস ছাড়া হবে। অর্থাৎ কখন বাস ছাড়বে, এর কোনো ঠিক নেই। তাই যেটা আগে টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাবে, সেই বাসে ওঠার জন্যই তাঁরা অপেক্ষা করছেন।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনে বেশ কিছু যাত্রীর জটলা ছিল

মহাখালী টার্মিনালে বেশির ভাগ বাস কোম্পানির টিকিট কাউন্টারগুলো যাত্রীর অভাবে বন্ধ রাখা হলেও এনা পরিবহনের বাস কাউন্টার ছিল খোলা। ওই বাসের কাউন্টারের সামনে ৪-৫ জন করে মানুষের জটলাও দেখা গেছে। এনা পরিবহনের একটি বাসের ভেতরে ১৩ জন যাত্রীকে অপেক্ষা করতেও দেখা গেছে।

এনার টিকিট কাউন্টারের একজন প্রতিনিধি জানান, সকাল ছয়টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত ময়মনসিংহের উদ্দেশে তাঁদের ২৫টি বাস ছেড়ে গেছে। তবে যাত্রী পর্যাপ্ত না থাকায় বাস ছাড়তে কিছুটা দেরি হচ্ছে।

নেত্রকোনার পূর্বধলা যেতে মহাখালীতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাদশা মিয়া। ঢাকায় তিনি তেজগাঁও এলাকায় থাকেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বাদশা মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, তিনটার দিকে মহাখালীতে পৌঁছান। দেড় ঘণ্টায় (সাড়ে ৪টা পর্যন্ত) নেত্রকোনার বিরিশিরি ও দুর্গাপুরগামী কোনো বাস ছাড়েনি। এখন এনা পরিবহনে করে ময়মনসিংহ পর্যন্ত যাবেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে বাড়ি যাবেন। ভোট দিতে বাড়ি যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।