সড়ক সংস্কার ও নালা নির্মাণকাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। হাঁটার জায়গাটুকুও না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাসিন্দারা। রাজধানীর উত্তরখানের শাহ্‌ কবির মাজার রোডের চালাবন এলাকা থেকে গত শুক্রবার দুপুরে তোলা
সড়ক সংস্কার ও নালা নির্মাণকাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। হাঁটার জায়গাটুকুও না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বাসিন্দারা। রাজধানীর উত্তরখানের শাহ্‌ কবির মাজার রোডের চালাবন এলাকা থেকে গত শুক্রবার দুপুরে তোলা

দুই মাস ধরে ঢাকার উত্তরখানের যে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, ভোগান্তি

উত্তরখানের শাহ্‌ কবির মাজার সড়কে যান চলাচল প্রায় দুই মাস ধরে বন্ধ। কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষোভ।

সড়ক সংস্কার ও নালার নির্মাণকাজ চলছে রাজধানীর উত্তরখানে। প্রায় দুই মাস ধরে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে এলাকাটির শাহ্‌ কবির মাজার সড়কে। এতে সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের খনন করা অংশে পাশের বাসাবাড়ির সীমানাদেয়াল ঘেঁষে কোনোমতে হেঁটে যাতায়াত করছেন বাসিন্দারা। গত শুক্রবার সরেজমিন এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

উত্তরার আজমপুর রেলক্রসিং থেকে শাহ্‌ কবির মাজার চৌরাস্তা হয়ে উত্তরখানের চামুরখান মোড় পর্যন্ত সড়কটি ৪ দশমিক ৩৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রস্থ গড়ে প্রায় ৩০ ফুট। এর মধ্যে প্রায় সোয়া দুই কিলোমিটার অংশে খোঁড়াখুঁড়ি করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর থেকে খননকাজ শুরু হয়েছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।

যেকোনো এক দিক থেকে কাজ শুরু করলে এবং একটি অংশ কাজ শেষ করে পরের অংশে কাজ ধরলে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কম হতো।
অধ্যাপক আকতার মাহমুদ, সভাপতি, আইপিডি

শুধু উত্তরখানই নয়, রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রধান সড়কেও প্রায় ছয় মাস ধরে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। নালা নির্মাণের জন্য সড়কের মাঝবরাবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে খুঁড়ে রাখা সড়কের কিছু অংশে হাঁটার জায়গাটুকুও নেই।

সরেজমিন দেখা যায়, শাহ্‌ কবির মাজার সড়কের আজমপুর কাঁচাবাজার থেকে চালাবনের ডেসকো কার্যালয় পর্যন্ত পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়ক খুঁড়ে পয়োনিষ্কাশন পাইপ স্থাপনের কাজ চলছে। মাটি-রাবিশ ফেলে রাখা হচ্ছে সড়কের দুই পাশে। ফলে সড়কের কোনো অংশ দিয়ে হেঁটে চলাচল করাও দুরূহ। মাটি-রাবিশের উঁচু-নিচু ঢিবির ওপর দিয়ে কোনোরকমে হেঁটে পার হচ্ছেন বাসিন্দারা।

চালাবনের বাসিন্দা কেরামত দেওয়ান বলেন, ‌‘সড়ক কাইটা ওই মাটি-ইট আবার সড়কে ওপরই রাখছে। মাটি-রাবিশ সরাইলে অন্তত মানুষ হাঁইটা যাইতে পারত, রিকশাও চালানো যাইত। কাজ করলে তো মানুষের সুবিধা-অসুবিধাগুলাও দেখা লাগে। তারা যেভাবে কাজ করতাছে, এলাকায় যে মানুষ আছে, সেটাই মনে হয় না!’

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দোকানিরা পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারছেন না। সড়কের আজমপুর কাঁচাবাজার অংশ থেকেই রিকশা ছেড়ে কাঁধে কিংবা মাথায় করে ভারী ব্যাগ, বস্তা বা পণ্য নিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁদের। অবশ্য আজমপুর কাঁচাবাজার থেকে চালাবনের দিকে প্রায় ২০০ মিটারের মতো সড়কে পাইপ বসানোর কাজ প্রায় শেষ। কিছু অংশে বালু ফেলা হয়েছে। তবে খনন করা অংশ সড়কের সঙ্গে সমান হয়নি।

বাসিন্দাদের এমন দুর্ভোগের বিষয়টি জানেন ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা টেকসই কিছু করতে গেলে অবশ্যই কিছুটা হলেও কষ্ট হবে। আমি তাদের (এলাকাবাসী) উদ্দেশে বলতে চাই, কষ্টের পর তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে। এলাকার গত ৫০ বছরে যে সমস্যা, সেটা শেষ হয়ে যাবে।’ ৪-৬ জুন ওই এলাকায় ‘অফিস করবেন’ বলেও জানান মেয়র।

ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজমপুর থেকে উত্তরখানের প্রধান সড়কে নালার কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। রাস্তার কাজ হয়েছে ৪৮ শতাংশ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই সড়কে নালার নির্মাণকাজ এবং নভেম্বরের মধ্যে সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ হবে।

উত্তরখানবাসীর দুর্ভোগের বিষয়ে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো এক দিক থেকে কাজ শুরু করলে এবং একটি অংশ কাজ শেষ করে পরের অংশে কাজ ধরলে বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কম হতো।