বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) হামলা হয়েছে। হামলাকারীরা উপাচার্যের কক্ষসহ বেশ কয়েকটি অফিস কক্ষ ভাঙচুর করেন। পাশাপাশি হাসপাতাল চত্বরে থাকা চিকিৎসক ও রোগীদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনার আকস্মিকতায় চিকিৎসক, নার্সদের পাশাপাশি রোগীরাও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন। গতকাল রোববার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরান ঢাকার দিক থেকে একটি মিছিল আসে শাহবাগে। তখন বিএসএমএমইউর সামনের দিকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। মিছিল থেকে তাঁদের ধাওয়া দেওয়া হয়। তাঁরা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে যান। ভেতর থেকে তাঁরা বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। তখন বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে হাসপাতালের প্রাঙ্গণে থাকা প্রায় ২০টি গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্স এবং ১৫টির মতো মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়।
বিক্ষোভকারীরা হাসপাতালের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাঁদের লক্ষ্য করে আবার ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। তখন আবার ভাঙচুর শুরু হয়। সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতাল প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যান বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে বিক্ষোভে এক দফা দাবিতে স্লোগান দেওয়া হয়। আরও বলা হয়, ‘আমার ভাই মরল কেন, প্রশাসন জবাব চাই।’
গতকাল দুপুরে হাসপাতাল এলাকায় পৌঁছে দেখা যায়, অনেক চিকিৎসক ত্রস্তব্যস্ত হয়ে হাসপাতাল ছাড়ছেন। সাধারণ মানুষ বা রোগীর স্বজনদের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকেও হাসপাতাল ছাড়তে দেখা যায়। অনেকের চোখে-মুখে ছিল আতঙ্ক। হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে থমথমে পরিবেশ দেখা যায়। বি ব্লকের নিচে ভাঙা আসবাব, কাচের টুকরা পড়ে আছে। ভাঙচুর হয়েছে মিলটন হলেও। দোতলায় উঠে দেখা যায়, উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও সহ-উপাচার্যদের এলাকা কলাপসিবল গেট লাগানো। কোনো মানুষ চোখে পড়েনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারীরা অ্যাম্বুলেন্স, মোটরসাইকেলসহ মোট ৫২টি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দিয়েছেন। উপাচার্যের কার্যালয় ও মিলটন হলসহ বি ব্লকের সব কটি অফিস ভাঙচুর করেছেন। ডি ব্লকে উঠে চিকিৎসকদের দ্রুত হাসপাতাল থেকে চলে যেতে বলেছেন। ইটপাটকেল ছুড়ে বেশ কয়েকটি ভবনের অনেক জানালা বা বারান্দার কাচ ভেঙেছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা তিনজনের সঙ্গে কথা হয় হাসপাতালের বহির্বিভাগের (২) নিচতলায়। তাঁরা বুঝতে পারছিলেন না, তাঁরা চিকিৎসার জন্য অপেক্ষা করবেন নাকি বাড়ি ফিরে যাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে ভাঙচুর, আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে রোগীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রোগীদের সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ল।