উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তির ভাগে অসমতা সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। এটা দূর করতে হবে। কারণ, লড়াই-সংগ্রামে নারী-পুরুষ সমানে সমানে অংশগ্রহণ করছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার আজ শুক্রবার এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। আজ বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে ‘২৪ গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী নারী ও গণক্ষমতায়ন: সম্ভাবনা ও করণীয়’ শিরোনাম এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেন্টার অব ইনক্লুসিভ বাংলাদেশ (সিআইবি) ও উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট এনহ্যান্সমেন্ট নেটওয়ার্ক (উইন) যৌথভাবে সভাটির আয়োজন করে। পরবর্তী সময়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব খবর জানানো হয়েছে।
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা বলেন, সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার না থাকায় যে পরিবারে শুধু মেয়ে সন্তান রয়েছে, তাঁরা বেশি অসহায়ত্বে পড়েন। এই অসমতা বড় বৈষম্যর হাতিয়ার। এখনো সন্তানের অভিভাবকত্বের জন্য নারীকে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়।
গণ–অভ্যুত্থানে নারী-পুরুষ পরস্পরকে আন্দোলনকারী ভেবেছেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, তাঁরা নিজেদের নারী বা পুরুষ হিসেবে ভাবেননি। সমাজে সব ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে ছাত্র-জনতা। সেই যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো বৈষম্য না করে মানুষ হিসেবে সমান অধিকার দিতে হবে নারীকে। তাঁদের মর্যাদার দৃষ্টিতে দেখতে হবে। মেয়েদের জন্য সুযোগ তৈরি করতে হবে, নিরাপত্তা দিতে হবে।
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা আখতার বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিটি আন্দোলনে নারীর ভূমিকা থাকলেও তাঁরা স্বীকৃতি পায়নি। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ বা সিডো সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন ও অভিন্ন পারিবারিক আইন তৈরি করতে হবে। ধর্ষণ, যৌতুক, বাল্যবিবাহসহ নারী নির্যাতন এখনো অব্যাহত আছে। নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে।
বেসরকারি প্রাণিস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা প্রশিক্ষণকেন্দ্র ‘মডেল লাইভস্টক অ্যাডভান্সমেন্ট ফাউন্ডেশন’–এর প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী সালমা সুলতানা বলেন, নারীদের এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা দূর করতে সমাজের প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অনেক নারী খামারি রয়েছেন, অথচ তাঁরা সরকারের জরুরি সেবা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এই সেবাগুলো পুরুষেরা নিয়ে নিচ্ছেন।
আমজনতার পাঠশালার পরিচালক সাবেক সচিব ম আ কাসেম মাসুদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হোসেন আনোয়ার, সাবেক নাট্যকর্মী অধ্যাপক ফ্লোরা সরকার, গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতিক ঐক্যের সমন্বয়ক কামাল হোসেন বাদল ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সাদিয়া আরমান, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্রের সদস্য ফারজানা আহমেদ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের শিক্ষক মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, স্বদেশি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আল-আমিন রাজু, নারী সংগঠক নুরুন্নাহার নীরু, সামিয়া রহমান ও পিংকি কনিকা প্রমুখ বক্তৃতা দেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিআইবির চেয়ারম্যান মেজবাহুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিআইবির কেন্দ্রীয় সংগঠক মো.লোকমান লিমন। অনুষ্ঠান শেষে বিভিন্ন পেশায় অবদান রাখার জন্য কয়েকজনকে সম্মাননা পদক দেওয়া হয়।