দেশে কিছু দুর্বৃত্ত আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। ‘মব জাস্টিসের’ নামে তারা নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটাচ্ছে। একই সঙ্গে ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক স্থাপনা ও মাজারে হামলা করে দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা বিনাশ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে।
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ফটকের সামনে ‘সারা দেশে ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক স্থাপনা ও মাজারে হামলার প্রতিবাদে আত্মার গান’ নামের প্রতিবাদী সমাবেশ ও গানের আসরে এ কথাগুলো বলেন সংস্কৃতিকর্মীরা। এই কর্মসূচির আয়োজন করে তীরন্দাজ নামের একটি নাট্য সংগঠন। এ বিষয়ে এটি তাদের দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন। এখানেই ২০ সেপ্টেম্বর হয়েছিল প্রথম আয়োজন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই সংগঠনের সভাপতি কাজী ইবরাহীম হোসাইন বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় ২৮টি শিল্পকলা একাডেমি কার্যালয়ে হামলা করা হয়েছে। এর পাশাপাশি সিলেটে হজরত শাহ পরান, গাজীপুরে শাহ সুফি ফসিহ পাগলার মাজারসহ বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা করা হয়েছে। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা মঈন উদ্দীন খান বাদলের কবরে পর্যন্ত হামলা করে প্রাচীর ভেঙে ফেলা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে এমন ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা কবি শাহিন রেজা বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে নতুন পরিস্থিতিতে সম্প্রীতি ও শান্তিবিনাশী কোনো তৎপরতা চলতে পারে না। দেশে এখন পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করছে। এখন যারা এসব সন্ত্রাসী কাজে জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সভায় অবিলম্বে শিল্পকলা একাডেমিসহ সব সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে দেশে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। নিজেরা আইন হাতে তুলে না নিয়ে কেউ অপরাধ করে থাকলে তাকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনার পরে শুরু হয় প্রতিবাদী, দেশাত্মবোধক ও বাউলগানের সম্মেলক ও একক পরিবেশনা। চলে অনেক রাত পর্যন্ত। ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা’ গানটি দিয়ে গানের পর্ব শুরু করেন শিল্পী আবিদ হাসান। সম্মিলিত কণ্ঠে ছিল ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’ ও ‘মুক্তির মন্দির সোপানতলে’। একক কণ্ঠের পরিবেশনায় ছিলেন জাহিদ মোহাম্মদ, হামিদ হাসান, ইব্রাহিম হাসান, শাহিন রেজা, সুমী আক্তার, তিলোত্তমা প্রমিতাসহ অনেকে। গানগুলোর মধ্যে ছিল ‘মানুষ ধরো মানুষ ভজো’, ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ’, ‘কোন মিস্তরি নাও বানাইছে’ ইত্যাদি। অনেক রাত পর্যন্ত চলতে থাকে গানের পরিবেশনা। পথচলতি বহু মানুষ সমবেত হয়ে গান শোনেন।
বেঙ্গল পরম্পরা সংগীতালয়ের দশম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে দুই দিনের সংগীতানুষ্ঠান ‘সুনাদ’–এর সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল আজ। সন্ধ্যায় ধানমণ্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল সম্মিলিত কণ্ঠে মেঘ রাগে ধ্রুপদ পরিবেশনা দিয়ে। পরে ছিল পটদীপ রাগে সৌনক দেবনাথের সারেঙ্গি বাদন। ছায়ানট রাগে ধ্রুপদ পরিবেশন করেন দিব্যময় দেশ। এরপর ছিল নবীন শিক্ষার্থীদের তবলায় সম্মিলিত ত্রিতাল বাদন। সুস্মিতা দেবনাথ খেয়াল পরিবেশন করেন গৌড় মাল্লার রাগে। শেষে ছিল ইলহাম ফুলঝুরি খান ও ইসরা ফুলঝুরি খানের সরোদ পরিবেশনা।