বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বসবাসকারী উর্দুভাষীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সি আর আবরার। তিনি বলেন, উর্দুভাষীদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের স্বীকৃতির ১৬ বছর পরও তাঁদের মর্যাদার সঙ্গে স্থায়ী পুনর্বাসনের বিষয়টি আজও সুরাহা হয়নি।
আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এক সংলাপে অংশ নিয়ে সি আর আবরার এসব কথা বলেন। ‘ক্যাম্পের উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর মর্যাদাপূর্ণ ও স্থায়ী পুনর্বাসন: জাতীয় প্রতিনিধি সমাবেশ ও সংলাপ’ শিরোনামে এই সংলাপের আয়োজন করে রামরু। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
সংলাপে অধ্যাপক সি আর আবরার বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে বসবাসকারী উর্দুভাষীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। তাঁদের অধিকার তাঁদেরকে ফিরিয়ে দিতে হবে। এখনই সময় তাঁদের অধিকার নিয়ে কথা বলার। অধিকার আদায় করতে গেলে তথ্য, তত্ত্ব ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে হবে। এগুলো আমরা শুরু করেছি, তবে বাস্তবায়নের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
সংলাপে অংশ নিয়ে প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, তাঁরা (উর্দুভাষীরা) এমন মানুষ, যাঁদের জমি কেড়ে নেওয়া যায়, হত্যা করা যায়, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া যায়, সবকিছু করা যায়। এমন কোনো জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে নেই, যাঁদের সঙ্গে সবকিছু করা যায়।
ফারুক ওয়াসিফ আরও বলেন, ‘বাংলা ভাষায় আমাদের “শহীদ মিনার” উর্দু ভাষা থেকে এসেছে। তারপরও এই স্বীকৃতিটা আমরা তাঁদের দিচ্ছি না।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য জাহেদ উর রহমান বলেন, ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বাংলাদেশের একটি সম্পদ। উর্দুভাষী কমিউনিটির তরুণদের সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।
মানবাধিকারকর্মী শিরীন হক বলেন, ‘আমি কিছু ক্যাম্প নিয়ে কাজ করছি। সেখানে আমি দেখেছি, নারীদের প্রতি বৈষম্য-নির্যাতন সব জায়গায় এক। উর্দুভাষী পুরুষদের প্রতি আহ্বান, যেখানে আপনারা বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন, সেখানে আপনারা নারীদের নির্যাতন করবেন না। আপনারা সবার অধিকার নিয়ে কথা বলুন, নিজেদের অধিকারও আদায় করুন।’
সংলাপে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন উর্দুভাষী বাংলাদেশি অধিকারকর্মী ও গবেষক হাসান মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘উর্দুভাষী বাংলাদেশিদের পরিচয়ের সংকট জিইয়ে রাখা হচ্ছে। এই সংকট আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এর মধ্য দিয়েই আমরা সমাধানের দিকে এগিয়ে যেতে পারব।’
অনুষ্ঠানে উর্দুভাষী জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি আশরাফুল হক বাবু বলেন, ‘বিগত ৫০ বছর আমরা ৮ বাই ৮ ফুটের একটি ঘরে মানবেতরভাবে বসবাস করছি। উচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও আমরা আজও যথাযোগ্য মর্যাদা পাইনি।’