আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল হত্যা মামলার বাদীকে আবারও হুমকি

জাহিদুল ইসলাম ওরফে টিপু
ফাইল ছবি

রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম (টিপু) হত্যা মামলার বাদী ও তাঁর স্ত্রী ফারহানা ইসলামকে আবারও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার রাতে অপরিচিত একটি মুঠোফোন নম্বর থেকে এ হুমকি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন তিনি।

হুমকির ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে গতকাল শাহজাহানপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ফারহানা ইসলাম। এ নিয়ে জাহিদুল নিহত হওয়ার পর তিনি নিরাপত্তা চেয়ে শাহাজাহনপুর ও মতিঝিল থানায় পাঁচটি জিডি করলেন।

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহজাহানপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) মাহিদুল ইসলাম। তিনি আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, দেশের বাইরের নম্বর থেকে ফারহানা ইসলামকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। জাহিদুল হত্যা মামলা তদন্ত করছে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। বিষয়টি ডিবিকে জানানো হয়েছে।

ফারহানা ইসলামের করা গতকালের জিডিতে বলা হয়েছে, বুধবার রাত ৮টা ২৯ মিনিটে অপরিচিত নম্বর থেকে তাঁকে ফোন করে বলা হয়, ‘মারুফ রেজা ওরফে সাগর, মাহবুবুর রহমান ওরফে টিটু ও মারুফ খানের জামিন নিয়ে কোনো ঝামেলা করলে “আপনার সমস্যা হবে”।’

১৮ এপ্রিল কারাগারে থাকা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ১০ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি মারুফ রেজা ওরফে সাগর এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মারুফ আহমেদ ওরফে মনসুরের ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুবুর রহমান ও মারুফ খানের আগামী ৩ মে পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে জামিনে মুক্ত হন আরও পাঁচ আসামি। সব মিলিয়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার আট আসামি জামিনে মুক্ত রয়েছেন।

একের পর এক আসামির জামিন মঞ্জুর হওয়ায় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন মামলার বাদী ফারহানা ইসলাম। তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১, ১১ ও ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। আজ প্রথম আলোকে ফারহানা বলেন, জাহিদুল হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’ সুমন শিকদারের জবানবন্দিতে আসা আওয়ামী লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের চার নেতার নাম মামলা থেকে বাদ দিতে চাপ দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এ অবস্থায় জামিন পাওয়া আসামি মারুফ রেজা, মাহবুবুর রহমান ও মারুফ খানের পক্ষ থেকে তাঁকে হুমকি দেওয়া হলো।

ফারহানা ইসলাম বলেন, জাহিদুল খুনের পর হুমকির মুখে তিনি নিজের ও সন্তানদের নিরাপত্তার জন্য শাহজাহানপুর ও মতিঝিল থানায় পাঁচটি জিডি করেছেন। এ ছাড়া তিনি ডিবির প্রধান, ডিবির যুগ্ম কমিশনার (দক্ষিণ) ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

আজ বিকেলে যোগাযোগ করা হলে ডিবির প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, জিডি করার বিষয়টি ফারহানা তাঁকে জানাতে এসেছিলেন। ওই জিডি শাহজাহানপুর থানা পুলিশ তদন্ত করছে।

জাহিদুল হত্যাকাণ্ডের পর দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সুমন শিকদারকে গত বছরের ৯ জুন ওমান থেকে ফিরিয়ে আনে পুলিশ। এরপর রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় সুমন শিকদারের দেওয়া জবানবন্দিতে জাহিদুল হত্যায় মারুফ আহমেদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদার, শান্তিনগরের হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল শাহরিয়ার, মারুফ রেজাসহ ১৬ জনের নাম এসেছিল।

গত বছরের ২৪ মার্চ রাতে শাহজাহানপুরে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলামকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে সময় ঘটনাস্থলে রিকশায় বসে থাকা কলেজছাত্রী সামিয়া আফনান ওরফে প্রীতিও (২২) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। ওই ঘটনায় ফারহানা ইসলাম অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে শাহজাহানপুর থানায় হত্যা মামলা করেন।

জাহিদুল হত্যায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ও র‍্যাব। তাঁদের মধ্যে রাকিবুর রহমান, ইয়াসির আরাফাত, ইশতিয়াক আহম্মেদ, মশিউর রহমান, আরিফুর রহমান (এক্সেল সোহেল), মারুফ রেজা, মাহবুবুর ও মারুফ খানের এর আগে কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হয়েছেন।