আন্দোলনের এক সমন্বয়কসহ অন্তত ৩০ জন আহত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছররা গুলিতে আহত কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান। আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা
 ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ বুধবার দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়েছে পুলিশ। বিকেলে মলচত্বর এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় কাঁদানে গ্যাসের শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের সঙ্গে ছররা গুলিও নিক্ষেপ করেছে তারা। এতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নানসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জনের মতো সাংবাদিক রয়েছেন।

আহত এই ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসংক্রান্ত নিবন্ধন খাতার তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আহত ৩০ জন এই হাসপাতালে গেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ আজ দুপুরে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের জন্য দুপুরে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজার কর্মসূচি ছিল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের। এই কর্মসূচি উপলক্ষে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনসহ কয়েকজন সেখানে উপস্থিত হন। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে আখতার হোসেনসহ আন্দোলনরত কয়েক শিক্ষার্থীর কথা-কাটাকাটি হয়। পুলিশ আখতার হোসেনকে আটকের চেষ্টা করে।

এ সময় সেখানে থাকা সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। তখন পুলিশ সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের দিকে দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। দুটি ফাঁকা সাউন্ড গ্রেনেডও ছোড়া হয়। এ সময় চ্যানেল এসের সাংবাদিক সোলেয়মান আহত হন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দায়িত্ব পালনের সময় আহত আলোকিত প্রতিদিনের সাংবাদিক ইমরান হোসেন (ডানে) এবং তাঁর প্রভাতি নিউজ পোর্টালের হুমায়ূন আহমেদ (বাঁয়ে)। আজ বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে তোলা

এ ছাড়া আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেডে যমুনা টেলিভিশনের সাংবাদিক ভাস্কর ভাদুড়ীসহ অন্তত ১০ সাংবাদিক আহত হন। আহত সাংবাদিকেরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বরে কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের মিছিলের খবর সংগ্রহ করতে গেলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড মারে। তখন তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। আহত অপর সাংবাদিকদের মধ্যে আছেন কালবেলার জনি রায়হান ও আকরাম হোসেন, আলোকিত প্রতিদিনের এমরান হোসাইন ও নিউজ প্রভাতের হুমায়ূন আহমেদ।

বিকেলে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়ক ও মলচত্বর এলাকায় পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনায় আবদুল হান্নানসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। হান্নানের শরীরে কয়েকটি ছররা গুলি লেগেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্র তানজিম আলামিন গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তানজিমের অভিযোগ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাঁকে হল ভবন থেকে নিচে ফেলে দেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ২৯৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ছাড়া গতকাল ঢাকার চানখাঁরপুল ও সায়েন্স ল্যাব এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগের নেতা–কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত এবং অনেকে আহত হয়েছেন।