চুরি
চুরি

টাকা চুরির মামলা করতে বাবার সঙ্গে থানায় গিয়েছিলেন মেয়ে, পরে তিনিই গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে দেড় কোটি টাকার বেশি চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেছিলেন এক ব্যবসায়ী। মামলা দায়েরের চার দিনের মাথায় থানা-পুলিশ জানতে পারে, ওই ব্যবসায়ীর টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত তাঁর একমাত্র মেয়ে। এ ঘটনায় মেয়েকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে মেয়ে পুলিশকে জানান, বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়ে তিনি নিজের পছন্দে বিয়ে করা স্বামীর হাতে তুলে দিয়েছেন।

পুলিশ পরে অভিযান চালিয়ে ওই ব্যবসায়ীর মেয়ের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর কাছ থেকে চুরির ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

মামলার বাদী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবদুল হামিদ। তিনি পেশায় ঠিকাদার। তাঁর টাকা চুরির ঘটনায় ৮ জুলাই গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন মেয়ে মিনা হামিদ ও মেয়ের জামাই সাকিবুল হাসান।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী হামিদের বাসার সিন্দুক থেকে টাকা চুরির ঘটনায় জড়িত তাঁর একমাত্র মেয়ে মিনা ও তাঁর স্বামী সাকিবুল। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা টাকা চুরির কথা স্বীকার করেছেন। তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।

ব্যবসায়ী আবদুল হামিদ ওরফে বাবুল স্ত্রী–সন্তান নিয়ে বসবাস করেন রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। ঈদুল আজহার দুই দিন আগে সপরিবার তিনি ভোলায় গ্রামের বাড়িতে যান। ঈদ উদ্‌যাপন শেষে গত ২০ জুন ঢাকার বাসায় ফেরেন তিনি। ঢাকায় ফেরার ১১ দিনের মাথায় তিনি বাসায় টাকা রাখার সিন্দুক খুলে দেখতে পান, তাঁর ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা নেই।

আবদুল হামিদ বাসায় সবাইকে টাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু টাকা নেওয়ার কথা কেউ-ই স্বীকার করেননি। পরে হামিদ ৪ জুলাই মেয়ে মিনাকে সঙ্গে নিয়ে মোহাম্মদপুর থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে চুরির মামলা করেন।

মামলা করা হলে মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের বাসায় যান। সিন্দুক না ভেঙে টাকা চুরির সঙ্গে ঘরের লোকজন জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে সন্দেহ করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। বাসায় বসবাসকারী প্রত্যেককে কৌশলে টাকা চুরির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, বাসার সব সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের একমাত্র মেয়ে মিনা হামিদকে তাঁদের সন্দেহ হয়। টানা চার দিন বাসায় গিয়ে পুলিশ নানা কৌশলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। একপর্যায়ে মিনা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, তিনি সিন্দুকের তালা খুলে টাকা চুরি করেছেন। সেই টাকা তিনি স্বামী সাকিবুল হাসানের কাছে দিয়েছেন। তাঁর তথ্যমতে সাকিবুলকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মিনা হামিদ বার-অ্যাট ল’ পড়ছেন। পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত বছর রাজধানীর তিতুমীর কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর পাস সাকিবুলকে বিয়ে করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিনা বলেন, তাঁদের বিয়ে পরিবার মানবে না। এ কারণে তিনি বাবার সিন্দুক থেকে টাকা নিয়েছেন। উদ্দেশ্য ছিল, বাসা থেকে কাউকে না বলে সাকিবুলের সঙ্গে সংসার শুরু করবেন।

অবশ্য টাকা চুরির বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি মামলার বাদী আবদুল হামিদ। আজ শনিবার মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিন্দুক থেকে টাকা চুরির ঘটনায় তাঁর মেয়েকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুল হক ভূঞা প্রথম আলোকে আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ী আবদুল হামিদের বাসার দরজা কিংবা সিন্দুকের তালা ভাঙা হয়নি, অথচ সিন্দুক থেকে টাকা চুরি হয়েছে। প্রথমেই আমরা ধরে নিই, বাসার কোনো লোক এই টাকা চুরির সঙ্গে জড়িত। পরে তদন্ত করে জানা গেল, হামিদের মেয়ে মিনাই টাকা চুরি করেছেন। তাঁর কাছে থাকা চাবি দিয়ে তিনি সিন্দুক খুলে টাকা নেন।’

পুলিশ জানায়, বাবার সিন্দুক থেকে টাকা চুরি করার পর সেটি স্বামী সাকিবুলের কাছে তুলে দেন মিনা।

পুলিশের এসআই মতিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, স্ত্রী মিনার দেওয়া ৯০ লাখ টাকা নিয়ে তিনি মোটরসাইকেলে করে সিরাজগঞ্জে নিজের বাড়িতে যান। টাকা গ্রামের বাড়িতে রেখে এসেছিলেন বলেও জানান তিনি।