বিডিআর হত্যাকাণ্ড তদন্তে ৭ সদস্যের কমিশন গঠন

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিশনের প্রধান করা হয়েছে বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমানকে।

সোমবার সকালে রাজধানীর পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদর দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। গত রোববার রাতে কমিশন গঠন–সংক্রান্ত নথিতে প্রধান উপদেষ্টা স্বাক্ষর করেছেন। এই কমিশন হবে সাতজনের। কমিশনের সভাপতি বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) সাবেক মহাপরিচালক এ এল এম ফজলুর রহমান।

উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, এই কমিশনে সামরিক বাহিনীর দুজন সদস্য রয়েছে। এ ছাড়া সিভিল সার্ভিসের (জনপ্রশাসন) একজন কর্মকর্তা, পুলিশের একজন কর্মকর্তা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষক আছেন কমিশনে।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় তৎকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনী বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) সদর দপ্তর পিলখানায় বিদ্রোহী জওয়ানদের হামলায় নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে ১৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে। মইন ইউ আহমেদ পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাপ্রধান ছিলেন।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ন্যায়বিচার নিশ্চিতে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল দাবি জানিয়ে আসছে। এমন প্রেক্ষাপটে ১৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তাঁর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলন করে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচনে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছিলেন। তবে সোমবার তিনি বলেন, কমিটি নয়, সরকার কমিশন গঠন করেছে।

কমিশন গঠন নিয়ে শিগগিরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করবে বলে জানা গেছে। এই কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন মেজর জেনারেল (অব.) এ এল এম ফজলুর রহমান। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন মেজর জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. সাইদুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, সাবেক উপ–পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক শাহনেওয়াজ খান।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড এবং সেখানে অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী ও ইন্ধনদাতাকে চিহ্নিত করবে নবগঠিত কমিশন। পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান, বিভাগ ও সংগঠন চিহ্নিত করাও এই কমিশনের অন্যতম কাজ হবে।

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে–পরে হওয়া অপরাধের স্বরূপ উদ্‌ঘাটন, ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা বা ঘটনার সহায়তাকারী দেশি–বিদেশি ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও দোষীদের চিহ্নিত করবে তদন্ত কমিশন। এই কমিশন বাংলাদেশের যেকোনো স্থান পরিদর্শন এবং সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে কমিশনে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। কমিশন প্রয়োজনে যেকোনো ব্যক্তিকে কমিশনের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানায়, প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে কমিশন সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।