ঈদের পরদিন প্রায় ফাঁকা রাজধানীর সড়কে আছে কিছু যানবাহন। কারওয়ান বাজার থেকে তোলা
ঈদের পরদিন প্রায় ফাঁকা রাজধানীর সড়কে আছে কিছু যানবাহন। কারওয়ান বাজার থেকে তোলা

‘এই বকশিশই আমাগোর বোনাস’

গুলশান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে রাইড শেয়ারিং অ্যাপে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নির্ধারিত ভাড়াই দেখাল। গন্তব্যে নেমে সে ভাড়া দিতে গেলে চালকের আবদার, ‘একটু বাড়তি দিয়েন।’

অ্যাপে তো বাড়তি দেখায়নি, বাড়তি কেন দিতে হবে জানতে চাইলে চালক ‘ঈদের বকশিশ’ চাইলেন।

বছরে দুবার ঈদ আসে, আনন্দ আসে, সঙ্গে আসে বকশিশও। গাড়ি বা রিকশা, যেটাতেই চড়ুন, ‘মামা, বকশিশ দিয়েন’—এ আবদার শোনেননি, এমন লোক কম।

ঈদের ছুটিতে রাজধানী ফাঁকা থাকে। মানুষ গ্রামে বা নিজ শহরে চলে যায়। ফলে গণপরিবহনের চাহিদাও কমে যায়। বাস চলে হাতে গোনা কয়েকটি। এতে রাজপথের রাজত্ব চলে যায় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার হাতে। এই চালকেরাও যেহেতু অনেকে ঈদ করতে চলে যান, তাই তাঁদের সংখ্যাও তুলনামূলক কম থাকে। ফলে তাঁদের চাহিদা তুঙ্গে। ৩০ টাকা দূরত্বের রিকশা ভাড়া হয়ে যাবে ৫০ টাকা। সিএনজিভাড়াও তা–ই, ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি হয়তো চাইবে।

ঈদের দিন বিকেলে মো. শরীফ স্বজনের বাসায় মাংস নিয়ে পান্থপথের রাসেল স্কয়ার থেকে মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডে যাওয়ার জন্য প্রথমে সিএনজি খোঁজেন। কিন্তু তিনটি সিএনজিকে ডেকেও উঠতে পারেনি। মাংস নিয়ে প্রথমে তাঁরা যেতে রাজি হননি। এরপর একজন এই পথে ১০০টা বাড়তি ভাড়া চেয়েছেন। অগত্যা ২৫০ টাকায় রিকশা ভাড়া করে গিয়েছেন।

ঈদের বকশিশ প্রসঙ্গে শাহবাগে বসে থাকা মো. সুলেমান নামের এক রিকশাচালক প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই বকশিশই আমাগোর বোনাস। কেউ তো আর সাইধ্যা বোনাস দিয়া যায় না।’ তাঁর সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজন রিকশাচালকেরও একই সুর, খুব কম যাত্রী আছেন, যাঁরা সেধে বকশিশ দিয়ে যান। বেশির ভাগ যাত্রীর কাছে বকশিশ চেয়ে নিতে হয়। নয়তো ভাড়া একটু বেশি চাওয়া হয়। এতে যে যা খুশি হয়ে দিয়ে যান, তা–ই লাভ।

আজ মঙ্গলবার তেজগাঁও সাত রাস্তার মোড় থেকে থেকে ফার্মগেট যাওয়ার জন্য রিকশা খুঁজছিলেন আমেনা বেগম। এক স্বজন অসুস্থ, তাঁকে দেখতে যেতে হবে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এই দূরত্বের ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা। কিন্তু আজকে ৮০ টাকা ছাড়া যেতে চাইছে না। গতকাল ঈদের দিনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলেন, সন্ধ্যার পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়েছিলেন হাতিরঝিল যাওয়ার জন্য। রিকশাভাড়াই দিয়েছেন ২০০ টাকা।

ঈদের কত দিন আগে থেকে বকশিশ চাওয়া শুরু হয় এবং কত দিন পর্যন্ত তা চলে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে রিকশাচালক ও সিএনজিচালকেরা জানান, সাধারণত ঈদের এক সপ্তাহ বা পাঁচ দিন আগে থেকে শুরু হয়। যখন মূলত মানুষ ঢাকা ছাড়া শুরু করে। আর তা চলে গণপরিবহনব্যবস্থা স্বাভাবিক নিয়মে চলা শুরু হওয়া পর্যন্ত।

ঈদুল আজহায় মাংস নিয়ে শহরের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার ওপর যাঁদের ভরসা করতে হয়, তাঁরা কিছুটা বিপাকেই পড়েন। অনেকেই মাংসসহ যাত্রী তুলতে চান না বা ভাড়া বেশি দিতে হয়।

এ ব্যাপারে রিকশাচালক ও সিএনজিচালকদের কথা হচ্ছে, অনেক যাত্রীর মাংসের প্যাকেট থেকে রক্ত, মাংস পড়ে রিকশা বা সিএনজির ভেতর অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। অন্য যাত্রী তোলার আগে ভালো করে পরিষ্কার করতে হয় তাঁদের।

খায়রুল আলম নামের একজন সিএনজিচালক ১০ বছর ধরে রাজধানী ঢাকায় এই পেশায় আছেন। এর মধ্যে চার থেকে পাঁচটি ঈদে ঢাকায় থেকেছেন। ঈদে বকশিশ চাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, বাড়তি আয়ের তো কোনো সুযোগ থাকে না। এই সময়েই বাড়তি কিছু পয়সা আসে। তবে তিনি দাবি করেন, যে বকশিশ তাঁরা চান, তা খুব বেশি নয়। তবে এটাও বলেন, মানুষের হাতে আগের মতো টাকা নেই। তাই বকশিশ আর আগের মতো তাঁরাও পান না।