গাছপালাসহ নিরিবিলি পরিবেশ থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় অনেকেই ঘুরতে যান। সেখানে ঘুরতে গিয়ে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠী ছেলে বন্ধু মারধরের শিকার হয়েছেন
গাছপালাসহ নিরিবিলি পরিবেশ থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় অনেকেই ঘুরতে যান। সেখানে ঘুরতে গিয়ে শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠী ছেলে বন্ধু মারধরের শিকার হয়েছেন

বিচার চেয়ে ছাত্রীর আবেদন

কার্জন হল এলাকায় এক ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠীকে মারধর করলেন ছাত্রলীগ কর্মীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল এলাকায় ছাত্রলীগের একদল কর্মীর বিরুদ্ধে এক ছাত্রী ও তাঁর সহপাঠী এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হল শাখার ওই কর্মীদের শাস্তি চেয়ে আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই ছাত্রী।

লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে তিনি ও তাঁর সহপাঠী এক ছাত্র কার্জন হল এলাকায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সামনে পুকুরপাড়ে বসে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এ সময় একদল শিক্ষার্থী তাঁদের দিকে এগিয়ে আসে এবং তাঁদের পরিচয় জানতে চান। মৌখিকভাবে তাঁরা তাঁদের পরিচয় দেন। এরপর তাঁর সঙ্গে থাকা সহপাঠী নিজের আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র দেখান। তবু ওই শিক্ষার্থীরা তাঁদের ওই স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। এ সময় ওই শিক্ষার্থীদের একজন তাঁর (ছাত্রী) চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করেন। তাঁর সহপাঠী এর প্রতিবাদ করায় ওই শিক্ষার্থীরা তাঁকে (সহপাঠী) বেধড়ক মারধর শুরু করেন। এমন অবস্থায় পাশে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী তালহা জুবায়ের এসে পরিস্থিতি সামাল দেন এবং সবাইকে চলে যেতে বলেন।

পরে দলবদ্ধভাবে আসা প্রথম বর্ষের ওই শিক্ষার্থীরা তাঁদের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের (দ্বিতীয় বর্ষ) ফোন করে ঘটনাস্থলে ডাকেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার সময় ৪-৫ জনের একটি দল দৌড়ে এসে আমার সহপাঠী ছাত্রকে মারতে শুরু করেন। এ সময় আমিও আঘাত পাই। আমার চশমা ভেঙে যায়। ঘটনা দেখে আশপাশ থেকে অনেকেই এগিয়ে আসেন এবং আমাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। খুব বেশি লোকসমাগম হলে ওই শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে শহীদুল্লাহ্ হল এলাকায় ঢুকে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে শ্লীলতাহানি, শারীরিক নির্যাতন ও অসদাচরণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার শিকার হওয়ায় আমি মর্মাহত এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন ওই ছাত্রী। তিনি খোঁজখবর নিয়ে হামলাকারীদের ছয়জনকে শনাক্ত করেছেন। লিখিত অভিযোগে তাঁদের নাম উল্লেখ করেছেন তিনি। তাঁদের মধ্যে চারজন প্রথম বর্ষের আর বাকি দুজন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তাঁরা সবাই ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ হলে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা সবাই হল শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফের অনুসারী শহীদুল্লাহ্ হল শাখার শীর্ষ পদপ্রত্যাশীদের নির্দেশনা মেনে চলেন তাঁরা। ঘটনার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের (এসএম হল) ছাত্র তালহা জুবায়ের প্রথম আলোকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ব্যাখ্যা ও প্রত্যক্ষদর্শী তালহার বক্তব্য প্রায় একই রকম।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মাকসুদুর রহমানের মুঠোফোনে কল করে সাড়া মেলেনি। পরে সহকারী প্রক্টর ইমাউল হক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগটি তিনি পেয়েছেন। প্রক্টরকে বিষয়টি জানাবেন। এরপর এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ আজ প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেবে৷ সত্যতা পাওয়া গেলে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকেও দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷