দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় আরও আটজনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের সাতজনেরই মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে। এ নিয়ে চলতি মাসের ১৭ দিনে ডেঙ্গুতে ১০০ জনের মৃত্যু হলো। গত মাসে ডেঙ্গুতে ১৩৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
আজ রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, আজ সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩৮৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকা বিভাগের (ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বাদে) বিভিন্ন হাসপাতালে সর্বোচ্চ ৪১২ জন ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ২০৯, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৪৬, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭২, খুলনা বিভাগে ১৫৯, বরিশাল বিভাগে ১২৩, রাজশাহী বিভাগে ৯৬, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪, রংপুর বিভাগে ১৯ ও সিলেট বিভাগে ৯ জন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৭৯ হাজার ৯৮৪ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত মাসেই ভর্তি হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৮ হাজার ১৬৭ জন।
নভেম্বরে সাধারণত এডিস মশাবাহিত এ রোগের প্রকোপ কমে আসে; কিন্তু এবার এর ব্যতিক্রম। চলতি মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার এই হার অব্যাহত থাকলে হাসপাতালে রোগী ভর্তি ও মৃত্যু বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. মুশতাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণ এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন—এ দুটি কাজের কোনোটিতেই কোনো উন্নতির লক্ষণ দেখছি না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ হয়েছে। স্থানীয় সরকার তো এখন আর দৃশ্যমান নেই। মনে হয় সবাই হাত গুটিয়ে বসে আছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ও মৃত্যু হয় গত বছর। তখন ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। আর মৃত্যু হয় ১ হাজার ৭০৫ জনের। এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৪১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০৮ জন নারী ও ২০৭ জন পুরুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২১ থেকে ২৫ বছর বয়সী ব্যক্তিরা। এ সংখ্যা ১২ হাজার ১৭৮। তবে ডেঙ্গুতে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২৬ থেকে ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের। এই বয়সী ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে।
বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে কি করা দরকার এমন প্রশ্নের উত্তরে মুশতাক হোসেন বলেন, ‘খুব দ্রুত রোগীর সংখ্যা হয়তো কমানো যাবে না, কিন্তু মৃত্যু কামানো যেতে পারে। আর এর জন্য দরকার চিকিৎসা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ। রোগী শনাক্ত এবং জটিল রোগীদের জন্য সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ এবং উন্নততর হাসপাতালে প্রেরণ—এই ব্যবস্থাটা দ্রুত করতে হবে। তাহলে অন্তত মৃত্যুটা কমানো যেতে পারে। তবে এমন তৎপরতা আমি দেখছি না।’
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালগুলোয়, এ সংখ্যা ১৭ হাজার ৫৮। এরপরই আছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানে রোগীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৮৬।
এ বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি ১৮৩ রোগীর মৃত্যু হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার হাসপাতালে। এরপর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের।