রাজধানীর মিরপুরে বনফুল আদিবাসী গ্রিনহার্ট কলেজে শুরু হয়েছে আদিবাসী খাদ্য ও শস্যমেলা। এতে পাহাড় ও শহরের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও মানবিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পাশাপাশি পাহাড়ি ঐতিহ্য সংরক্ষণের আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা।
শুক্রবার সকালে এ মেলার উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। দুই দিনব্যাপী এই মেলা চলবে শনিবার বিকেল পর্যন্ত।
মেলায় বিভিন্ন স্টল দেওয়া হয়েছে। এসব স্টলে সারা দেশের পাহাড় ও সমতলের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার, শস্যপণ্যের প্রদর্শনী ও বিক্রি করা হচ্ছে। শস্যগুলো কীটনাশকমুক্ত অবস্থায় চাষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্টল দেওয়া ব্যক্তিরা।
ফরিদা আখতার বলেন, শরীরকে সুস্থ রাখতে ভালো খাবার খেতে হয়। যেকোনো খাবার খেয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আধুনিক উৎপাদনের নামে আধুনিক কৃষির নামে, সার দাও, কীটনাশক দাও, এমনকি বীজটাকেও নষ্ট করে ফেলে। বীজ যেটা আদি ছিল, সেই বীজকেও নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে।
খাদ্যনিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উপদেষ্টা বলেন, তামাক কোম্পানি পার্বত্য এলাকায় গিয়ে জুমচাষের এবং অন্যান্য জমি নিয়ে তামাক চাষ করছে। এ কারণে খাদ্য উৎপাদনের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পাহাড়ি এলাকায় তামাক চাষের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। পাশাপাশি রাবার চাষও সেখানে হচ্ছে। যত ক্ষতিকর কাজ আছে, সেখানে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা অর্গানিক খাবারের গুরুত্ব ও পাহাড়ি অর্থনীতির উন্নয়নের ওপর আলোকপাত করেন। পাশাপাশি পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, শুধু অর্গানিক খাবার নয়, পাহাড়ি অঞ্চলের শস্য এবং ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর উপকার পায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘খাবার শুধু দেহের পুষ্টির জন্য নয়, এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অংশ। সারা বিশ্বে ৭০ কোটি মানুষ প্রতিদিন না খেয়ে রাতে ঘুমাতে যায়। অনেকেই খাবার অপচয় করে, কেউ কেউ আবার অনাহারে থাকে। আমরা যেন কেউ খাবার অপচয় না করি।’
কিশোরগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক দিলিপ কুমার বলেন, পাহাড়ের রাসায়নিকমুক্ত শস্য নিয়ে শহরের মানুষের আগ্রহ তৈরি করতে পারলে তারাও স্বাস্থ্যকর খাবার পাবে। এতে পাহাড় ও শহরের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও মানবিক সম্পর্কও তৈরি হবে।
আয়োজক নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন শুভেচ্ছা বক্তব্যে বলেন, পাহাড়ি খাবারগুলো স্বাদ ও পুষ্টিতে ভরপুর। শহরবাসী যদি এগুলো গ্রহণ করে, তাহলে সুস্বাস্থ্য লাভের পাশাপাশি পাহাড়ি অর্থনীতিরও উন্নতি হবে।
শেষ মহা প্রজ্ঞা এডুকেশন ট্রাস্টের সভাপতি ভদন্ত প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরো সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, শহরে এ ধরনের আয়োজন আদিবাসী ও শহরের জনগোষ্ঠীর মধ্যে দূরত্ব কমাতে ভূমিকা রাখবে। তিনি শহরের বাসিন্দাদের মেলায় গিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর পাহাড়ি খাদ্যপণ্য কেনার আহ্বান জানান।
পরে অতিথিরা মেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এ সময় অতিথিরা স্টলগুলোতে বিক্রি করা নানা পদের খাবারের স্বাদ নেন। মেলায় সকাল থেকেই মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সকালে বেশি ভিড় ছিল পাহাড়ের সবজি বিক্রি করা বিভিন্ন স্টলে। অনেকেই পরিবারের জন্য এসব সবজি কিনে নিয়ে যান।