মেট্রোরেলের উদ্বোধনের দিন বড় টিভিতে সজীব দেখেছিল, একটা ট্রেন অনেক ওপর দিয়ে চলছে। একটা ট্রেন কীভাবে মাথার ওপর সেতুর দিয়ে এত দ্রুত চলে, টেলিভিশনের পর্দায় দেখা সজীব বিস্মিত হয়ে যায়। সজীব সেই ‘ট্রেনে’ চড়েছে, তার বিস্ময়ের ঘোরও কেটেছে।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সহায়তায় আট শতাধিক শিশু আজ সোমবার মেট্রোরেলের বিশেষ একটি ট্রিপে চড়ার সুযোগ পেয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে সজীব। কমলাপুরে থাকা সজীবের চিরচেনা ট্রেনের সঙ্গে এই ট্রেনের কোনো মিল নেই। সজীব বলে, ‘এই ট্রেন টিভিতে দেখছি, অনেক সুন্দর আর পরিষ্কার।’ কথা বলার সময় চোখমুখে হাসি তার।
কেরানীগঞ্জ শিশু বিকাশ কেন্দ্রের চতুর্থ শ্রেণির আরিফ বন্ধুদের সঙ্গে টিকিটের লাইনে নাচানাচি করছিল। ততক্ষণে মেট্রোরেলে তার চড়া শেষ। আগারগাঁও থেকে কিছুক্ষণ আগেই উত্তরার দিয়াবাড়ি স্টেশনে সে এসেছে। এখন আবার চড়ে যাবে আগারগাঁওয়ে। কেমন লাগছে জানতে চাইলে তার উত্তর, ‘একদম আলাদা। কত তাড়াতাড়ি যায়। খুব ভালো লেগেছে।’
বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত ২০২০ ও ২০২১ সালের জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় সারা দেশ থেকে বিজয়ী ৪৭৪ শিশুকে আজ মেট্রোরেল ভ্রমণ করানো হয়। এ ছাড়া শিশু বিকাশ কেন্দ্র থেকে ২০০ ও পথশিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে ১৩৫ শিশুও মেট্রোরেলের বিশেষ যাত্রায় চড়ার সুযোগ পেয়েছে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী অগ্নিপরীও এ যাত্রায় এসেছে। সকাল থেকেই তাদের প্রস্তুতি শুরু হয়। সবাই একসঙ্গে বাসে চড়ে হইহুল্লোড়, গান গাইতে গাইতে মেট্রোরেল স্টেশনে এসেছে।
বাস থেকে নেমেই শিশুরা একটি গান করছিল—‘বিদ্যুতে চলবে, লাগবে না তেল/ঢাকায় এসেছে মেট্রোরেল’। পুরো যাত্রাতেই এই লাইনগুলোর সঙ্গে নেচেগেয়ে সময় পার করেছে তারা।
শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকি ইনাম বলেন, এ ভ্রমণের মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার সাক্ষী হলো শিশুরা। তারা আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। তাদের আনন্দ দেখে সবারই আনন্দ লাগছে।
জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের শিশু একাডেমির পক্ষ থেকে নগর ভ্রমণ করানো হয় বলে জানালেন শিশু একাডেমির মহাপরিচালক আনজীর লিটন। তিনি বলেন, নগর ভ্রমণের অংশ হিসেবে এবার তাদের মেট্রোরেলে চড়ানো হয়। তাদের এই স্মৃতি সারা জীবন মনে থাকবে।
মেট্রোরেল সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলাচল করে। শিশুদের জন্য নিয়মিত সূচির বাইরে দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিশেষ একটি স্লটে আগারগাঁও থেকে উত্তরা এবং উত্তরা থেকে আবার আগারগাঁওয়ে আনা হয়।
শিশুদের ভ্রমণ প্রসঙ্গে ডিএমটিসিএলের উপপ্রকল্প পরিচালক (জনসংযোগ) নাজমুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, শিশু একাডেমি আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমটিসিএলের শিশুদের এই ভ্রমণের বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছিল। তাদের এমন সুযোগ দিতে পারা অবশ্যই মেট্রোরেলের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে।
মেট্রো ভ্রমণ শেষে সব শিশুর হাতে একটি উপহারের প্যাকেট দেয় ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ। এতে ছিল মেট্রোরেলের ছোট রেপ্লিকার খেলনা ট্রেন ও মেট্রোগার্ল নামের একটি কার্টুন বই।