প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

এডিবির গবেষণা

গর্ভে থাকা শিশুরাও জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের বেশির ভাগ গ্রামাঞ্চলে বৃষ্টি কমে আসছে। এতে কৃষক পরিবারগুলোর আয় কমছে। ফলে বৃষ্টি কমছে, এমন এলাকার মায়েরা গর্ভকালীন অবস্থায় পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছেন না। এতে করে শিশুরা মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় দুর্বল হয়ে পড়ছে। জন্মের পরেও তারা অপুষ্টির শিকার হচ্ছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) একটি গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে। আজ বুধবার রাজধানীর পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। পিআরআইয়ের আয়োজনে ‘স্বাস্থ্য খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় জলবায়ু নীতি: বাংলাদেশ থেকে তথ্য-প্রমাণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জলবায়ুবিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদেরা বক্তব্য দেন।

বৈঠকে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এডিবির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ মিনহাজ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টিপাতের ধরনে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।...বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে, এমন এলাকাগুলোর যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের আওতায় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেখানে শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।’

উদাহরণ হিসেবে মিনহাজ মাহমুদ বলেন, অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে খর্বাকৃতি ও কৃশকায় শিশুদের সংখ্যা জলবায়ু প্রকল্প নেওয়া এলাকায় কমে আসছে। কিন্তু ওই উন্নতি স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রকল্পের কারণে হচ্ছে তা নয়। মূলত কৃষি খাতে উন্নতি এবং ভালো ফসল হওয়ার কারণে গ্রামীণ পরিবারগুলোর আয় বেড়েছে। ফলে ওই সব এলাকার পরিবারে শিশুদের পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

সুপারিশ হিসেবে মিনহাজ মাহমুদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় গ্রামীণ জনপদের অধিবাসীদের জীবিকার উন্নতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কৃষি খাতে উন্নতি হলে এবং আয় বাড়লে পরিবারগুলোতে গর্ভবতী নারী ও শিশুরা পুষ্টিকর খাবার পাবে। এতে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। ফলে জীবিকার উন্নতিকে মাথায় রেখে জলবায়ু প্রকল্প নেওয়া বেশি জরুরি।

বৈঠকে সঞ্চালকের বক্তব্যে পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঋতুবৈচিত্র্য ও বৃষ্টিপাতের ধরনে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ওই পরিবর্তনের প্রভাব মানুষের জীবন-জীবিকা এবং স্বাস্থ্যে কী ধরনের পরিবর্তন আনছে, তা বোঝা জরুরি। আর কোন ধরনের উদ্যোগ ও প্রকল্প নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা করে টিকে থাকা যাবে, তা ঠিক করতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. অনন্ত নীলিম বলেন, ‘বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন বৃষ্টি ও পানি ব্যবস্থাপনার ওপরে বেশি প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তার ওপরে পানির প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ। ফলে পরিবর্তনগুলোকে আমলে নিয়ে তা অর্থনীতির ওপরে কী ধরনের প্রভাব ফেলছে, সেটা আমাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে।’

সমাপনী বক্তব্যে পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. খুরশিদ আলম বলেন, বাংলাদেশের কৃষি থেকে শুরু করে অবকাঠামো, পানি ব্যবস্থাপনাসহ প্রতিটি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে। এসব প্রভাব মোকাবিলায় নিয়মিতভাবে গবেষণা করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচারক ড. বজলুল হক খন্দকার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জাহিদুল কাইয়ুম প্রমুখ বক্তৃতা দেন।