একাধিকবার অভিযান চালালেও তেজগাঁও রেলগেট-সাতরাস্তা সড়কটি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান দখলমুক্ত করতে পারেনি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি তোলা
একাধিকবার অভিযান চালালেও তেজগাঁও রেলগেট-সাতরাস্তা সড়কটি ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান দখলমুক্ত করতে পারেনি ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি তোলা

ঢাকায় হচ্ছে বহুতল ট্রাক টার্মিনাল

বর্তমানে সরকারি জমি ও সড়কে অবৈধভাবে ট্রাক রাখা হয়। টার্মিনালের জন্য তেজগাঁওয়ে সাড়ে পাঁচ একর জায়গা পেয়েছে ডিএনসিসি।

রাজধানীতে দিনে প্রায় ছয় হাজার ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। নির্দিষ্ট টার্মিনাল না থাকায় এসব পরিবহন তেজগাঁও, গাবতলী, মিরপুর ও আমিনবাজার এলাকায় সরকারি জমি এবং রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবৈধভাবে রাখা হয়। এতে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে। এমন পরিস্থিতিতে বহুতল একটি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।

তেজগাঁও এলাকায় এই ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণে দুই মন্ত্রণালয় থেকে ৫ দশমিক ৪২ একর জমি বরাদ্দ পেয়েছে ডিএনসিসি। এর মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৩ দশমিক ৮১ একর আর গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ৬১ একর জমি দিয়েছে। ইতিমধ্যে জমি বুঝে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ডিএনসিসি। করপোরেশনের সার্ভেয়াররা (জরিপকারী) বরাদ্দ পাওয়া জায়গার সীমানা নির্ধারণ করেছেন।

তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা–সংলগ্ন এলাকায় টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে রেলের যে জায়গায় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান রাখা হয়, তার বিপরীত পাশে মেয়র আনিসুল হক সড়কের পাশ ঘেঁষে জায়গাটির অবস্থান। জায়গাটি উঁচু দেয়ালে ঘেরা। অব্যবহৃত থাকায় গাছগাছালি জন্মে অনেকটা জঙ্গলে রূপ নিয়েছে।

জায়গা বরাদ্দ পাওয়া বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, নির্দিষ্ট টার্মিনাল না থাকায় তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এতে যানজট লেগেই থাকে। দুটি মন্ত্রণালয় থেকে জায়গা পাওয়া গেছে। এখন বহুতল টার্মিনাল নির্মাণে প্রকল্প নেওয়া হবে।

তবে চিঠিতে তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এক. টার্মিনালের নকশা করবে স্থাপত্য অধিদপ্তর। দুই. গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে। তিন. যে উদ্দেশ্যে জমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে অন্য কাজে জমি ব্যবহার করা যাবে না। শর্ত ভাঙলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে।

তিন শর্তে বরাদ্দ

জমি বরাদ্দ দিয়ে গত ১৭ অক্টোবর গণপূর্ত মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে বলা হয়, বহুতল ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণে সাতরাস্তা–সংলগ্ন শিল্প প্লট ১ ও ২-এর ১ দশমিক ৬১ একর জমি ডিএনসিসিকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলো।

তবে চিঠিতে তিনটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। এক. টার্মিনালের নকশা করবে স্থাপত্য অধিদপ্তর। দুই. গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করবে। তিন. যে উদ্দেশ্যে জমি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, এর বাইরে অন্য কাজে জমি ব্যবহার করা যাবে না। শর্ত ভাঙলে বরাদ্দ বাতিল করা হবে।

টার্মিনালের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে জমি দিয়েছে, সেটি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেডের (বিটিসিএল) নিজস্ব অর্থায়নে ‘তেজগাঁও টেলিকম টাওয়ার ভবন’ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত ছিল। নভেম্বরের শুরুর দিকে ডিএনসিসিকে দেওয়া চিঠিতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলেছে, টার্মিনাল নির্মাণে ৩ দশমিক ৮১ একর জায়গা বুক ট্রান্সফারের (সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তর) মাধ্যমে ডিএনসিসিকে হস্তান্তরে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন।

আশা করা যায়, এবার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। নকশা প্রণয়ন, প্রকল্প অনুমোদন সবকিছু শেষে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম

বন্ধ হবে ‘টম অ্যান্ড জেরি খেলা’

বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, রাজধানীতে দিনে ছয় হাজারের মতো ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল করে। তেজগাঁওয়ে রেলওয়ের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে এসব পরিবহনের টার্মিনাল। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় আশপাশের সড়কেও রাখা হচ্ছে ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান।

২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ডিএনসিসির তৎকালীন মেয়র আনিসুল হকের উদ্যোগে তেজগাঁও রেলগেট-সাতরাস্তা সড়ক ট্রাক-কাভার্ড ভ্যানের দখলমুক্ত করা হয়েছিল। পরে সড়কটির নামকরণ করা হয় প্রয়াত মেয়রের নামে। কিন্তু সড়কটি আবার ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের দখলে চলে গেছে। এরপর ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ একাধিকবার অভিযান চালালেও সড়কটি দখলমুক্ত করতে পারেনি।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম এ সড়কে উচ্ছেদ অভিযান চালান। তখন তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে এলে রাস্তা খালি হয়ে যায়। ফিরে গেলে আগের মতোই দখল হয়ে যায়। ট্রাকমালিক ও চালকেরা আমাদের আর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে টম অ্যান্ড জেরি খেলা খেলছেন।’

এই ‘টম অ্যান্ড জেরি খেলা’ বন্ধ করতেই বহুতল টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ। মেয়র আতিকুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করা যায়, এবার সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। নকশা প্রণয়ন, প্রকল্প অনুমোদন সবকিছু শেষে আগামী জুলাইয়ের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’

টার্মিনালটি ১০ তলার হতে পারে জানিয়ে ডিএনসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান রাখার পাশাপাশি এতে চালক-শ্রমিকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকবে। সর্বোচ্চসংখ্যক গাড়ি রাখতে ভূগর্ভস্থ অংশও ব্যবহার করা হবে।

এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, টার্মিনাল না থাকায় চালক ও শ্রমিকদের কষ্ট বেশি হয়। এটি নির্মিত হলে দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হবে।