রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বাড্ডাসহ কয়েকটি এলাকায় আজ শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সারা দেশ প্রায় অচল হয়ে পড়ে। রাজধানী ছাড়াও দেশের ৪৭টি জেলায় গতকাল দিনভর বিক্ষোভ, অবরোধ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, পুলিশের হামলা-গুলি ও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ ছাড়া আহত অন্তত দেড় হাজার। আজ শুক্রবারও সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
আজ শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে নামেন আন্দোলনকারীরা। অন্যদিকে পুলিশ, র্যাব, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা-কর্মীও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন।
আজ সকালে রামপুরা ব্রিজ থেকে শুরু করে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। অন্যদিকে রামপুরা ব্রিজসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয় বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য।
সকাল ১০টার আগে থেকে এই সড়কে আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা ইটপাটকেল ছোড়েন।
রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডা পর্যন্ত সড়ক বিভাজকের রেলিং ভেঙে তা রাস্তায় ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। কোনো কোনো জায়গায় স মিল থেকে কাঠ এনে সড়কে ফেলে তা বন্ধ করে রাখা হয়। পুরো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে রোগীসহ অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
সকাল ১০টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে চিৎকার করতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ছররা গুলি ছোড়ে। আহত এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বাড্ডাসংলগ্ন গুদারাঘাট থেকে গুলশান ১ নম্বরের দিকে যেতে সড়কে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। দুপুর ১২টার দিকে এই এলাকাটিতে এমন অবস্থা দেখা যায়।
রাজধানীর উত্তরায় বেলা সোয়া ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা উত্তরা পূর্ব থানা ঘিরে অবস্থান নেন। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে।
দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, আন্দোলনকারীরা উত্তরা রাজলক্ষ্মী সেন্টার ও বিএনএস টাওয়ারের সামনের সড়ক অবরোধ করে অবস্থান নিয়ে আছেন।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় সকাল থেকে আন্দোলনকারী ও পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা চলছে। সকাল আটটা থেকে আন্দোলনকারীরা সেখানে জড়ো হতে থাকেন। এ সময় পুলিশ কয়েক দফায় রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। এখানে বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে দেখা যায়, পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দিতে অভিযান চালাচ্ছে।
এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, মালিবাগসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগ এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।