জন্মনিবন্ধন
জন্মনিবন্ধন

৪৯ জন রোহিঙ্গার জন্মনিবন্ধন হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটিতে

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৪৯ জনকে জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে। গত বুধবার (৫ জুন) স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন শাখার রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে দেওয়া একটি চিঠিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটির কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) থেকে জানানো হয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি থেকে ৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে। আইন–বহির্ভূতভাবে নিবন্ধন দেওয়া এসব জন্মসনদ বিডিআরআইএস সিস্টেম থেকে স্থগিত করা হয়েছে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, ওই ৪৯ জন রোহিঙ্গার জন্মসনদ দেওয়ার সময় যেসব নিবন্ধক ও নিবন্ধন সহকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন, তাঁদের ৫ কর্মদিবসের মধ্যে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে। না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে গতকাল রোববার ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে একটি চিঠি দেয় সংস্থাটির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক। রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয় থেকে দেওয়া চিঠির কথা উল্লেখ ওই সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যাখ্যা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী আজ সোমবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে দেওয়া জন্মনিবন্ধন নম্বরগুলো যাচাই করে দেখা হয়েছে। সার্ভারে ওই জন্মনিবন্ধন নম্বরগুলোর অস্তিত্ব নেই। ওই জন্মসনদগুলোকে অবৈধ এবং নির্ভরযোগ্য নয় বলেও জানান তিনি।

পুলিশের তালিকায় ১০২ জনের নাম

গত ২৬ মে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ১০২ জন ব্যক্তি অবৈধ উপায়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জন্মনিবন্ধন নিয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট করিয়েছেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের পাসপোর্টের বিষয়ে অধিকতর অনুসন্ধান করা হয়। অনুসন্ধানে ওই ব্যক্তিদের পাসপোর্টে উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায়নি। ওই ব্যক্তিরা বিভিন্ন স্থান থেকে দালাল চক্র, অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রতারণা করে জন্মনিবন্ধন নিয়েছেন। ওই ব্যক্তিরা রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ভুক্ত  মিয়ানমারের নাগরিক।

উত্তর সিটির কোথা থেকে কতজন নিবন্ধন পেয়েছে

পুলিশের বিশেষ শাখা থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে দেওয়া ১০২ জনের তালিকার মধ্যে ৭৭ জনের নাম পেয়েছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে ৪২ জন রোহিঙ্গার। ডিএনসিসির অঞ্চল-২ থেকে ৯টি, অঞ্চল-৩ থেকে ১৭টি, অঞ্চল-৪ থেকে ১৪টি, অঞ্চল-৫ ও অঞ্চল-৯ থেকে একটি করে জন্মনিবন্ধন দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্মনিবন্ধন দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তাহলে বিভাগীয় ব্যবস্থাসহ যে ধরনের শাস্তি আছে, সেটা দেওয়া হবে।

আগেও হয়েছে এমন ঘটনা

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে জন্মনিবন্ধনে জালিয়াতি করায় এক কর্মীকে চাকরিচ্যুত ও এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ। চাকরিচ্যুত হওয়া কর্মী হলেন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫-এর স্বাস্থ্য শাখার জন্ম-মৃত্যুনিবন্ধন সহকারী মাফরুজা সুলতানা। তিনি অঞ্চল-৩ ও অঞ্চল-৯-এ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতেন। আর সাময়িক বরখাস্ত হয়েছিলেন ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৩ ও অতিরিক্ত দায়িত্ব অঞ্চল-৯-এর সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সহকারী সার্জন) আজিজুন নেছা। পরে আবার নিজ পদে বহাল করা হয়।

ওই বছরই এপ্রিলে জন্মনিবন্ধন জালিয়াতির ঘটনায় আরও একবার ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি দিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ। তখন দক্ষিণ কোরিয়ার একজন নাগরিক ও একজন রোহিঙ্গাকে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। তবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।