সারা শরীরে নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি ১৩ বছরের শিশু কল্পনা আগের চেয়ে একটু ভালো আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে তাকে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। শরীরের ক্ষত শুকানোর পর তার দাঁতের চিকিৎসা করা হবে।
১৯ অক্টোবর বেসরকারি চ্যানেল ৭১ টেলিভিশনের সাংবাদিক ইশতিয়াক ইমনের মাধ্যমে ভাটারা থানার পুলিশের সহায়তায় বসুন্ধরার একটি বাসা থেকে কল্পনাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। আটক করা হয় বাসার মালিক তরুণী দিনাত জাহানকে। ওই বাসায় কল্পনা চার বছর ধরে ছিল।
নির্যাতনে কল্পনার ওপরের পাটির সামনের চারটি দাঁত ভেঙে গেছে। হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধর ও ছ্যাঁকার ক্ষত। একদিকে মারধর, অন্যদিকে রক্তশূন্যতা। শারীরিক সমস্যার সঙ্গে আছে মানসিক ট্রমাও।
আজ শনিবার বিকেলে কল্পনার মায়ের মুঠোফোনে কল দিলে তিনি প্রথম আলোকে জানান, মেয়ে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই ভালো আছে। কল্পনার সঙ্গে অল্প একটু সময়ের জন্য কথা হয়। সে বলল, ‘দুপুরে মাংস-ভাত খাইছি। দাঁত ভাঙা, তাই চাপার দাঁত দিয়্যা চাবাইয়্যা খাইছি।’ অনেক দিন পর মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছে বলেও জানাল।
বার্ন ইউনিটের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দীনের অধীনে ভর্তি আছে কল্পনা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কল্পনা আগের চেয়ে ভালো আছে। তবে মেয়েটির শারীরিক দুর্বলতা আছে। সারা শরীরে ক্ষত। বিভিন্ন ক্ষতস্থানে পুঁজ জমেছিল। গত মঙ্গলবার অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ক্ষত থেকেই ৩০০ এমএল পুঁজসহ অন্যান্য জায়গার পুঁজ পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে।
মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন জানান, কল্পনার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া লাগাতে হবে। শরীরের ক্ষত শুকানোর পর কল্পনার দাঁতের চিকিৎসা করতে হবে।
আজ কল্পনা প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করে, বাসার মালিকের সঙ্গে মালিকের এক ভাইও তাকে মারধর করতেন। দিনে একবেলা খাবার দেওয়া হতো তাকে। মা ফোন করলেও ফোনের সামনে দিনাত জাহান থাকতেন বলে কল্পনা মাকেও নির্যাতনের কথা বলতে পারত না।
কল্পনারা পাঁচ বোন ও এক ভাই। কল্পনার বাবা শরিফ মিয়া কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন। থাকেন সিলেটের হবিগঞ্জে। মেয়েকে মারধরের অভিযোগে কল্পনার মা আফিয়া বেগম গত শনিবার বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ (সংশোধিত ২০২০)–এর অধীনে ভাটারা থানায় দিনাত জাহানের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
কল্পনার মা আফিয়া বেগম আজ প্রথম আলোকে মুঠোফোনে বলেন, মেয়ে আগের চেয়ে এখন অনেকটাই ভালো আছে।
ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাজহারুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, মামলার আসামি দিনাত জাহান কারাগারে। এ ঘটনায় সহযোগী অপরাধী হিসেবে দিনাত জাহানের ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ধর্ষণের শিকার শিশুটির ভয় একটু কমেছে
ধর্ষণের শিকার বনানীর ৯ বছর বয়সী শিশুটি বর্তমানে একটু ভালো আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার সার্বিক চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
১৮ অক্টোবর প্রথম আলো অনলাইনে ‘ধর্ষণের শিকার শিশুটির অবস্থা ভয়াবহ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল হক আজ বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশুটির চিকিৎসা চলছে। আপাতত এই শিশুর আর কোনো অস্ত্রোপচার করা হবে না। ধর্ষণে শিশুটির প্রজনন অঙ্গের টিস্যু নরম হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে অস্ত্রোপচার করে সুফল পাওয়া যাবে না। তিন থেকে ছয় মাস পর অস্ত্রোপচার করা হবে। একইভাবে প্রস্রাব করার জন্য যে ক্যাথেটার লাগানো হয়েছে, তা–ও বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করার পর খুলে দেওয়া হবে। শিশুটির মানসিক ট্রমার দিকেও খেয়াল রাখা হচ্ছে।
শিশুটি এখন রাতে ঘুমাচ্ছে, আগের তুলনায় ভয়ও খানিকটা কমেছে বলেও জানালেন মোহাম্মদ মঈনুল হক।
মেয়েটির বাবা রাজধানীতে রিকশা চালান। মেয়ের এ ঘটনায় তিনি বনানী থানায় ১৪ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) আইন ২০২০-এ ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সরোয়ার আজ প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ থেকে ধর্ষণ মামলার অজ্ঞাতনামা আসামির ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। ছবি অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তির বয়স ৫০ বছরের বেশি। এ মামলাটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানালেন তিনি।