ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাময়িক বহিষ্কার হওয়া প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) আশিকুর রহমানকে পুনরায় জোরপূর্বক স্বপদে বসানোর পেছনে কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও বিএনপির প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ইশরাক হোসেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে একটি গোষ্ঠী বা কতিপয় দুর্বৃত্ত আমার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, দখলদারত্বসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন মার্কেট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল, চাঁদাবাজি ও নগর ভবনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছে। এমনকি সিটি করপোরেশনের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে জোরপূর্বক পুনরায় স্বপদে বসানোর পেছনে আমার ইন্ধন রয়েছে বলেও বিভিন্ন গণমাধ্যম সংবাদ প্রচার করে আসছে। এ বিষয়ে আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এ ধরনের অপকর্মে আমার ন্যূনতম কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দলীয় ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে ইশরাক হোসেন বিবৃতিতে আরও বলেন, ‘আমার নাম ভাঙিয়ে একটি চক্র এহেন অপকর্ম সংঘটিত করছে। ফলে গণমাধ্যমেও আমার নামে অপ্রচার চালানো হচ্ছে। যারা এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে আসছে, আমি তাদের চিনি না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রশাসনকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ ছাড়া আশিকুর রহমানকে জোরপূর্বক স্বপদে পুনর্বহালের পেছনে তাঁর ইন্ধন রয়েছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা ইশরাক হোসেন। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে তাঁর নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের বিষয়টি অবহিত করায় গণমাধ্যমকর্মীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।
ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আশিকুর রহমানকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এমন পরিস্থিতিতে গত ১৩ আগস্ট স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের আবেদন করেন তিনি। সেই আবেদন গৃহীত হয়নি। দায়িত্ব পালনে অবহেলা, অসদাচরণ, অদক্ষতা ও দুর্নীতির অভিযোগের গুরুদণ্ডে দণ্ডনীয় অপরাধের কথা উল্লেখ করে পরদিন তাকে করপোরেশন থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পাশাপাশি এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এরই মধ্যে গত সোমবার সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মেহেদী হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের নেতা সৈয়দ মুকিতুল হাসান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি ওমর ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলম ও কবি নজরুল সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইহসান মামদুদ আশিকুর রহমানকে নিয়ে নগর ভবনে আসেন। তারা প্রচার করেন, ইশরাকের নির্দেশে তাঁরা আশিককে বসিয়েছেন।
পরে ইশরাক হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে তাঁকে বিপদে ফেলতে একটি চক্র নানা অপকর্মে তাঁর নাম ব্যবহার করছে। তিনি দক্ষিণ সিটির প্রকৌশলী আশিকুর রহমানের বিষয়ে কিছুই জানেন না। আজ গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়ে নিজের অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন।
এদিকে আশিকুর রহমানকে স্বপদে বসাতে দলবলসহ নগর ভবনে নিয়ে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে মন্তব্য করতে রাজি হননি সূত্রাপুর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক মেহেদী হাসান।
আশিকুর রহমানকে আবারও পদে বসাতে মেহেদীসহ তাঁর সঙ্গে থাকা নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের কথা শোনা যাচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী বলেন, বিষয়টি সত্য নয়।
এদিকে আজ গণমাধ্যমে ইশরাক হোসেনের বিবৃতি দেওয়ার খবর জানাজানি হলে নগর ভবন থেকে দ্রুত বের হয়ে যান আশিকুর রহমান। অভিযোগ উঠেছে, নগর ভবন থেকে এই প্রকৌশলীকে নিরাপদে বের হয়ে যেতে সহায়তা করেছেন মেহেদী হাসান, মুকিতুল হাসান ও তাঁর অনুসারীরা।