বিএনপির ডাকা নবম দফার অবরোধের শেষ দিন আজ সোমবার রাজধানীতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলছে। তবে তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় কম। অন্যদিকে, দূরপাল্লার বাস টার্মিনালগুলো প্রায় ফাঁকা। তাই দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রী পাওয়ার অপেক্ষায় থাকছে।
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলের মহাসচিবসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। দাবি আদায়ে দলটির ডাকে গতকাল রোববার সকাল ছয়টা থেকে নবম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হয়। এই কর্মসূচি আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত চলবে।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন দল-জোটও এই কর্মসূচি পালন করছে। পৃথকভাবে অবরোধের কর্মসূচি পালন করছে জামায়াতে ইসলামীও।
আজ সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে বের হয়ে মহাখালী বাস টার্মিনালে যাওয়ার পথে সড়কে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলতে দেখা যায়। বিজয় সরণিসহ বিভিন্ন সিগন্যালে পড়তে হয়।
মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে অনেক বাস রয়েছে। কিন্তু যাত্রী খুব কম। তাই দূরপাল্লার বাসগুলো যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছে।
মো. আকবর নামের এক ব্যক্তি তাঁর ছেলের বউকে বাসে তুলে দিতে সকাল সোয়া নয়টার দিকে এই বাসস্ট্যান্ডে আসেন। এই যাত্রীর গন্তব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুটি চৌমুহনী। কাজী পরিবহনের টিকিট কেটে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু যাত্রী পাওয়া সাপেক্ষে সকাল ১০টার দিকে বাস ছাড়বে বলে জানানো হয়।
এখানকার বাস কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। কয়েকটি কাউন্টারে তালা দেওয়া। যেগুলো খোলা আছে, সেগুলোর সামনে যাত্রীর চেয়ে পরিবহনকর্মীদের আনাগোনা বেশি।
কাজী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মোরশেদ আলী বলেন, আজ ভোর থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত তাঁদের কোম্পানির চারটি বাস গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। গতকাল সারা দিনে তাঁদের ১২টি বাস ছাড়ে। এই সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ে ৩০টির বেশি হয়।
একই কথা বললেন অনন্যা পরিবহনের কর্মী মো. সাগর। তিনি কাউন্টারের সামনে বেঞ্চে বসে সম্ভাব্য যাত্রী দেখলেই ডাকছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন যাঁদের দরকার, তাঁরা নিজে কাউন্টারে এসে টিকিট কেটে বসে থাকছেন। আর তাঁদের (পরিবহনকর্মী) এখন আর যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতা আগের মতো করতে হচ্ছে না।
এনা পরিবহনের কাউন্টারে থাকা কর্মী মেহেদী হাসান বলেন, সকাল থেকে তাঁদের ২০টির মতো বাস ছেড়ে গেছে। অন্য সময় হলে এই সংখ্যা আরও বেশি হতো।
মহাখালী বাস টার্মিনালে তিন বছর ধরে বাদাম-বুট বিক্রি করেন জামাল মিয়াজি। ডালাভর্তি বাদাম-বুট নিয়ে বসে বসে পরিবহনকর্মীদের সঙ্গে গল্পগুজব করছিলেন তিনি। বিক্রিবাট্টার অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে দিনে ১২ থেকে ১৪ শ টাকা বিক্রি হতো। এখন ৬০০ টাকাও হয় না।
বাস টার্মিনালে যাত্রী না থাকায় বিক্রিতে ভাটা পড়েছে বলে জানান জামাল। তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির শুরুর দিকে ভৈরবে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। ২০ দিন থেকে আবার ঢাকায় ফিরে এসেছেন। তবে বেচাবিক্রির অবস্থা ভালো নয়। এখন আর দিনে সব বাদাম-বুট বিক্রি হয় না।
চার সন্তান নিয়ে জামালের স্ত্রী গ্রামে থাকেন। বেচাবিক্রি কমে যাওয়ায় জামালের এখন সংসার চালাতে ধারদেনা করতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
বিরোধী দলের টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি চলছে, সামনে জাতীয় নির্বাচন, এ অবস্থায় জামাল কী পরিস্থিতি দেখছেন—এমন প্রশ্নে তাঁর উত্তর, ‘আমার চিন্তা পেটের ধান্দা।’