ঢাকা মহানগরের ৪ শতাংশের বেশি বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে। ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এ মশা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তুলনায় দক্ষিণ সিটির এলাকায় বেশি পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৯৮টি ওয়ার্ডে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে আজ বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় ওই জরিপ করা হয়।
ঢাকা উত্তর সিটির ৪০টি ওয়ার্ড ও ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৫৮টি ওয়ার্ডের মোট ৩ হাজার ১৫০টি বাড়িতে জরিপটি করা হয়। এর মধ্যে ১২৭টি বাড়িতে এডিস মশা পাওয়া গেছে। ১২৭টির মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৭৬টি এবং উত্তর সিটির ৫১টি বাড়ি রয়েছে। অর্থাৎ উত্তর সিটির ৩ দশমিক ৮ শতাংশ ও দক্ষিণ সিটির ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার উপস্থিতি রয়েছে।
এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে বহুতল (চারতলা বা তার চেয়ে বেশি) বাড়িতে, যার হার ৩৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে নির্মাণাধীন স্থাপনা (৩২ দশমিক ৩ শতাংশ)। সবচেয়ে কম এডিস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে তিনতলা বা তার চেয়ে কম উচ্চতার বাড়িগুলোয় ১১ দশমিক ৮ শতাংশ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, এই জরিপ থেকে এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি কী হবে, তা অনুমান করা যায় না। আগামী মাসে বর্ষা–পূর্ববর্তী জরিপ হবে। সেটার ওপর ভিত্তি করে এ বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। তবে এই জরিপে যে ফল পাওয়া গেছে, তার ওপর ভিত্তি করে সিটি করপোরেশন কাজ করতে পারে। যেমন বহুতল ভবনে মশা বেশি পাওয়া গেছে। নির্মাণাধীন ভবনেও ভালোই মশা পাওয়া গেছে। এ ধরনের যেসব বিষয় প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, তা ধরে সিটি করপোরেশন কাজ করতে পারে।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৮৯৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৪৬২ জন এবং ঢাকার বাইরে ৪৩৬ জন রয়েছেন। এ বছর আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন মারা গেছেন।
কয়েক বছর ধরে দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ২০২০ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০৫। ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৮২৯ জনে। ২০২২ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৬২ হাজার ৩৩৫ জনে। ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছিল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) আহমেদুল কবীর বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মারা যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এ কারণে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা জরুরি। এই জরিপের কারণে কোন কোন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ, তা জানা যাবে। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে এই জরিপ সিটি করপোরেশনকে সহায়তা করবে।